ক্যানসার বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রায় ৯৬ লাখ মানুষ ক্যান্সারে মারা গেছে যা বিশ্বে মোট মৃত্যুর প্রায় প্রতি ছয়টির মধ্যে একটি।
গবেষণায় দেখা গেছে, মোট ক্যানসারের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশই প্রতিরোধযোগ্য। যদিও কিছু ঝুঁকির কারণ যেমন জেনেটিক্স বা পরিবেশগত প্রভাব পরিবর্তন করা যায় না, তবে অনেকগুলো কারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখানে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় এমন চারটি প্রধান কারণ এবং তা কমানোর উপায় তুলে ধরা হলো১. তামাক
তামাক ক্যানসার ও ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ। ডাব্লিউএইচও জানায়, তামাকের ধোঁয়ায় সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক থাকে, যার মধ্যে অন্তত ৬৯টি ক্যানসারের কারণ হতে পারে। ধূমপান ফুসফুস, মুখ, গলা ও মূত্রথলির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতি বছর বিশ্বে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। ঝুঁকি এড়াতে তামাকজাত পণ্য সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা জরুরি২. অ্যালকোহল
আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (আইএআরসি) অ্যালকোহলকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এটি খাদ্যনালী, লিভার, কোলোরেক্টাল ও স্তন ক্যানসারসহ অন্তত ৭ ধরনের ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি প্রথম চুমুক থেকেই অ্যালকোহল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় কোনো পরিমাণই নিরাপদ নয়। ঝুঁকি কমাতে অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়াই উত্তম।
৩. শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও স্থূলতা খাদ্যনালী, কোলোরেক্টাল, স্তন, এন্ডোমেট্রিয়াল ও কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ডাব্লিউএইচও-এর তথ্যমতে, ২০১২ সালে উচ্চ বিএমআই প্রায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ক্যানসারের জন্য দায়ী ছিল এবং বছরে ১ লাখ ১০ হাজার স্তন ক্যানসারের ঘটনা ঘটেছে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো৪. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, বেকন, সালামি, হ্যাম ইত্যাদি) ও অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার (প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, চিপস, বিস্কুট, কোলা, মিষ্টি) ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকা নাইট্রেট, নাইট্রাইট ও অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঝুঁকি কমাতে শাকসবজি, ফল, পূর্ণ শস্য, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ জরুরি। মেডিটেরানিয়ান ডায়েট বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে স্বীকৃপেইনকিলার সেবনে কী কিডনির ক্ষতি হয়, চিকিৎসকের পরামর্শদৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে আমরা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পেইনকিলার ওষুধ গ্রহণ করি। মাথাব্যথা, আঘাত, আর্থরাইটিস কিংবা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য এই ওষুধ অনেক সময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধারে বা অতিরিক্ত মাত্রায় পেইনকিলার সেবন করলে তা কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো, কী ধরনের পেইনকিলার কিডনির জন্য ক্ষতিকর, কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, এবং কী কী লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া দরকার।
পেইন এবং পেইনকিলারের ধরন: যন্ত্রণা হতে পারে আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী। আকস্মিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে আঘাত, অপারেশন বা গুরুতর জ্বর। আর দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণা তিন মাসের বেশি সময় ধারে থাকতে পারে, যেমন আর্থরাইটিস, স্নায়ুর ক্ষতি, ক্যানসার বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে।
বাজারে প্রচুর ধরনের পেইনকিলার পাওয়া যায়। বেশিরভাগই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনা যায়, যেমন অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল), ওষুধের গ্রুপ এনএসএআইডি (যেমন ইবুপ্রোফেন, নাপ্রোক্সেন, ডিক্লোফেনাক)। এছাড়াও কিছুকিছু ওষুধের জন্য ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লাগে, যেমন শক্তিশালী এনএসএআইডি, অপিওয়েড, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং কোর্টিকোস্টেরয়েড। কিছু পেইনকিলার বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ঝুঁকি বাড়ায়।
যেভাবে পেইনকিলার কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে: দীর্ঘ সময় ও অতিরিক্ত মাত্রায় কিছু পেইনকিলার কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে আঘাত করে, যা ধীরে ধীরে কিডনির ফাংশন কমিয়ে দেয়। এনএসএআইডি গ্রুপের ওষুধ এই ক্ষতির জন্য প্রধান অপরাধী। তারা কিডনিতে রক্তের প্রবাহ কমিয়ে দেয়, যা কিডনি আঘাত বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ সৃষ্টি করতেঅ্যাপিওয়েড সরাসরি কিডনি ফিল্টারকে ক্ষতি না করলেও, কিডনি সমস্যাযুক্ত রোগীদের মধ্যে এগুলো জমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কোর্টিকোস্টেরয়েড সরাসরি কিডনি ক্ষতি না করলেও রক্তচাপ বৃদ্ধি, ফ্লুইড রিটেনশন এবং রক্তে সুগার বাড়িয়ে কিডনির ওপর চাপ বাড়ায়। একাধিক ওষুধের মিশ্রণ দীর্ঘদিন ব্যবহার করাও কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দৈনিক মিশ্রিত পেইনকিলার নেয়া উচিত নয়।
কারা বেশি ঝুঁকিতে: কিডনি রোগী, মধ্যবয়স্ক ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তি, হার্ট বা লিভার রোগী, রক্তচাপের ওষুধ সেবনকারী, অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত, যারা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন অথবা ডিহাইড্রেশন হয় এসব রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে। যদিও স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরাও দীর্ঘমেয়াদি ও বেশি মাত্রায় পেইনকিলার নিলে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। কিডনি ক্ষতি প্রথম দিকে টের পাওয়া যায় না। পরে ক্লান্তি, প্রস্রাবে রক্ত, বারবার প্রস্রাব, পিঠে বা পাশের দিকে ব্যথা, বমি, পায়ে ফোলা এবং স্মৃতিভ্রংশের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার: সবচেয়ে জরুরি হলো ক্ষতিকারক পেইনকিলার ব্যবহার বন্ধ করা। ডাক্তাররা রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা, ইমেজিং এবং প্রয়োজনে বায়োপসি করেন সমস্যার মাত্রা নির্ণয়ের জন্য। পানি খাওয়া বাড়ানো, ওষুধের ডোজ সামঞ্জস্য, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং বিকল্প ব্যথানাশক ব্যবহার চিকিৎসার অংশ। লক্ষ্য হলো কিডনির আরও ক্ষতি রোধ এবং বিদ্যমান কিডনি সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা।
ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি, কিন্তু পেইনকিলার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা আরও জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি বা অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবন কিডনির জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের ডোজ বা ব্যবহারে পরিবর্তন করবেন না। নিয়মিত শরীরের অবস্থা পরীক্ষা করিয়ে নিন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করুন, যাতে কিডনি সুস্থ থাকে এবং জীবনযাত্রা সুন্দর হয়।
Post a Comment