প্রিয়নবী (সা.)-এর শৈশবের সাক্ষী যে নারী সাহাবি

 প্রিয়নবী (সা.)-এর দুধ বোন ছিলেন হজরত আশ-শায়মা বিনতে আল হারিস আস-সাদিয়া (রা.)। তার আসল নাম হুযাফা। ডাকনাম আশ-শায়মা। দেহে অতিরিক্ত তিল থাকার কারণে তাকে এই নাম দেওয়া হয়েছে।


তিনি বনু সাদ গোত্রের হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর কন্যা ছিলেন। শিশু মুহাম্মদের (সা.) লালন-পালনে মা হালিমাকে সহযোগিতা করেছিলেন আশ-শায়মা।


হজরত হালিমা শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে দুই বছর পর্যন্ত দুধ পান করান। এরপর মক্কায় নিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর পরিবারের সম্মতিতে আবারো শিশু মুহাম্মদকে নিজের গোত্রে নিয়ে আসময়টাতে হাঁটতে শিখছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। দুধ ভাইদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন, অন্য বেদুঈন শিশুদের মতো মাঝেমাঝে পশু চরাতে যেতেন চারণভূমিতে। বাড়ির বাইরে কোথাও গেলে আশ-শায়মা তাকে দেখাশুনা করতেন। রোদের তাপ বেশি হলে বা কখনো অনেকে দূরে গেলে কোলে তুলে নিতেন তাকে। মাঝে মাঝে কোল থেকে নামিয়ে হাত ধরে চলতেন। খানিক পথ হাঁটার পরে আবারো কোলে তুলে নিতেন তাকে। কখনো কখনো শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে গাছের ছায়ায় বসতেন। শ্লোক গেয়ে বলতেন, হে আমাদের পরোয়ারদিগার! আমার ভাই মুহাম্মাদকে বাঁচিয়ে রাখুন।শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর মাঝে যে কল্যাণ বিদ্যমান ছিল, তা আশ শায়মা ও তাদের পরিবারের সবাই প্রত্যক্ষ করেছিলেন একেবারে কাছ থেকে। তাই তার প্রতি ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সবার।


মা হালিমা সবসময় মুহাম্মদকে নজরে নজরে রাখতেন। দূরে কোথাও যেতে দিতেন না। আশ-শায়মা কখনো তাকে নিয়ে দূরে কোথাও গেলে সতর্ক করে দিতেন, মুহাম্মদকে চোখের আড়াল করতে নিষেধ করতেন। এতেও তিনি নিশ্চিন্ত হতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে দেখে আসতেএকদিন দুপুরের প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মা হালিমা। একটু পরে টের পেলেন আশ-শায়মা ও শিশু মুহাম্মদ কেউ নেই আশে-পাশে। প্রচণ্ড রোদে তারা কোথায় গেলো তা ভেবে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন। খুঁজতে বেরিয়ে দেখলেন বাড়ির অদূরে একটা গাছের নিচে শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে খেলছেন আশ-শায়মা।মা হালিমা তাকে ধমক দিয়ে বললেন, এই দুপুর রোদে তাকে নিয়ে খেলছো কেন? শায়মা বললেন, মা আমার ভাইয়ের গায়ে কোনো রোদ লাগেনি। আমি তাকে নিয়ে বের হওয়ার পর দেখেছি, সে যেদিক দিয়ে গেছে সেখানে তার মাথার ওপর মেঘ তাকে ছায়া দিয়েছে। তার গায়ে একটুও রোদ লাগেনি। একথা শুনে শিশু মুহাম্মদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন মা হালিমা।


সময় গড়িয়ে চললো, শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে পরিণত বয়সে নবুয়ত পেলেন মুহাম্মদ (সা.)। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেএরমধ্যে অনেক যুদ্ধ সংঘাত সংঘটিত হয়েছিল। হাওয়াযিন নামক যুদ্ধে বনু সাদের অনেক নারী-পুরুষ মুসলিমদের হাতে বন্দী হলো। বন্দীদের মধ্যে আশ-শায়মাও ছিলেন।


বন্দীদের মদিনায় নিয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মদ (সা.) দুধ বোন আশ-শায়মার পরিচয় পেলেন। পরিচয় পাওয়ার পর তিনি দুধ বোনের সম্মানে চাদর বিছিয়ে দিলেন। তাকে বসিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। তারপর বললেন, তুমি চাইলে আদর-যত্ন ও সম্মানের সঙ্গে আমার কাছে থেকে যেতে পারো। আবার ইচ্ছা করলে নিজের গোত্রের কাছে ফিরে যেতে পারো। আশ-শায়মা ইসলাম গ্রহণ করে নিজের গোত্রে ফিরে গেলেএরমধ্যে অনেক যুদ্ধ সংঘাত সংঘটিত হয়েছিল। হাওয়াযিন নামক যুদ্ধে বনু সাদের অনেক নারী-পুরুষ মুসলিমদের হাতে বন্দী হলো। বন্দীদের মধ্যে আশ-শায়মাও ছিলেন।


বন্দীদের মদিনায় নিয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মদ (সা.) দুধ বোন আশ-শায়মার পরিচয় পেলেন। পরিচয় পাওয়ার পর তিনি দুধ বোনের সম্মানে চাদর বিছিয়ে দিলেন। তাকে বসিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। তারপর বললেন, তুমি চাইলে আদর-যত্ন ও সম্মানের সঙ্গে আমার কাছে থেকে যেতে পারো। আবার ইচ্ছা করলে নিজের গোত্রের কাছে ফিরে যেতে পারো। আশ-শায়মা ইসলাম গ্রহণ করে নিজের গোত্রে ফিরে গেলেতিনি ফিরে যাওয়ার সময় রাসুল (সা.) তার সঙ্গে একটি একজন দাস-দাসী, অনেক ছাগল-ভেড়া ও বকরী উপঢৌকন দিলেন। আশ-শায়মার জীবন সম্পর্কে আর কোনো তথ্য জানা যায় না। তিনি কখন, কোথায় ইন্তেকাল করেছেন তাও অজ্ঞাত।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post