অপবাদ ঘোচাতে প্রাথমিক শিক্ষায় নানা পদক্ষেপ

 



সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘গরিবের স্কুল’- এ অপবাদ বহুদিনের। এবার সেই ধারণা ভাঙতে একসঙ্গে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এসবের মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল পাঠদান, উপবৃত্তি, মিড-ডে মিল ও বৃত্তি পরীক্ষা আবার চালু করা। সব মিলিয়ে এক ধরনের বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।


চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ, শ্রেণিকক্ষ সজ্জিত করা এবং ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে শিক্ষক সংকট কাটাতে ব্যাপক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। তবে আর্থিকভাবে সচ্ছল অভিভাবকদের বড় অংশ সন্তানদের এখনও কিন্ডারগার্টেনে পাঠায়। অনেকেই সরকারি স্কুলের পরিবেশ, শিক্ষকের মান ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।


একজন অভিভাবক দীপ্তি চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি স্কুলে এক ক্লাসে অনেক ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা সময় দিতে পারেন না। ভালো পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে কিন্ডারগার্টেনে দিচ্ছি।’


শিক্ষকদের মধ্যেও এক ধরনের অসহায়ত্ব কাজ করে। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষকের সন্তানও যদি নিজের স্কুলে না পড়ে, তাহলে বাইরের কেউ কীভাবে আস্থা রাখবে? অনেক জায়গায় খেলার মাঠ বা লাইব্রেরি নেই, সহশিক্ষা কার্যক্রমও নেই।’


এই বাস্তব অবস্থা জেনেই নতুন কৌশলে এগোচ্ছে সরকার। দীর্ঘদিন পর আবার চালু হচ্ছে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের উৎসাহ দেওয়া হবে, পাশাপাশি সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ধরে রাখার চেষ্টাও চলছে। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে শুধু সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্ডারগার্টেন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ‘বৈষম্যমূলক’ বললেও মন্ত্রণালয় বলছে- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বৃত্তি পরীক্ষা রয়েছে, সেখানে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারে না।


রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোবাশেরা বলে, ‘মা গৃহকর্মী। অনেক সময় কাজে যেতে হয় আমাকে। স্কুলেই যতটুকু পড়া হয়, সেটাই আমার ভরসা।’


সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এসব প্রণোদনা ও নীতিগত পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে বদল আসবে প্রাথমিক শিক্ষায়। তবে আমাদের শিক্ষায় বাজেট আরও বাড়াতে হবে। এখনও কাক্সিক্ষত বরাদ্দ নেই শিক্ষা খাতে।


এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, ‘সব মিলিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়ন প্রক্রিয়া এখন আর শুধু পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ নয়- এটি বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে, যদিও সমাজে রয়ে গেছে দীর্ঘস্থায়ী একটি মানসিক বাধা, যা ভাঙতেই এ লড়াই।’


জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) গবেষণায় দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীরা পঠন ও গাণিতিক দক্ষতায় সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে। কারণ, হিসেবে উল্লেখ করা হয় গৃহশিক্ষক, কোচিং এবং বাড়তি যত্নের বিষয়গুলো।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post