বটগাছটির ‘অলৌকিক ক্ষমতা’ রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সেই বিশ্বাসের ধারণা থেকে গাছটির গায়ে লাল শাড়ি ও কাপড় বেঁধে দেন কিছু লোক। আর মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে অনেকেই এখানে এসে বিভিন্ন মনোবাসনা মানত করতে থাকেন। পক্ষান্তরে, এই ‘মানত’ করা ইসলামি ধর্মীয় দৃষ্টিতে ‘শিরক ও বিদআত’ বলে আখ্যা দিয়ে পুরো বটগাছটিকেই কেটে ফেললেন কয়েকজন ক্ষুব্ধ মুসল্লি।গতকাল সোমবার সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি গ্রামের কুমার নদের খেয়াঘাটে এ ঘটনা ঘটে।বটগাছটি কাটার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।সরেজমিন ও স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া শতবর্ষী বটগাছটির ‘অলৌকিক ক্ষমতা’ রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। সেই বিশ্বাসের ধারণা থেকে গাছটির গায়ে লাল শাড়ি ও কাপড় বেঁধে, মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে অনেকেই মানত করতেন। এই ‘মানত’ করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে ‘শিরক ও বিদআত’ বলে আখ্যা দিয়ে এই গ্রামের কয়েকজন মুসল্লি গতকাল সোমবার সকালে করাত দিয়ে পুরো গাছটি কেটে ফেলেন।শিরখাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন মুসল্লি বটগাছটি কাটার বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে লোকমুখে শুনেছি, অভিযুক্তরা দাবি করেছেন—এই বটগাছটিতে এসে মানুষ পূজা করে, মানত করে। অনেকে মনে করত গাছটির অলৌকিক ক্ষমতা আছে। এই বিষয়টিতে একশ্রেণির লোকজন মনে করেছে—এসব বিদআত, শিরিক। এই অভিযোগ নিয়ে তারা গাছটি কেটে ফেলেছে।’স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এই গাছটি তো মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি। একশ্রেণির লোক এখানে মানত করে। এটি মেনে নিতে না পেরে পুরো গাছটিকে কেটে ফেলা হলো। এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে এজন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।’
এ ঘটনায় তোলপাড়া সৃষ্টি হলে আজ মঙ্গলবার সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি সকালেই আলম মীরের কান্দি গিয়ে বট গাছটিকে দেখে এসেছি। গাছটির ৯০ শতাংশই কেটে ফেলা হয়েছে। মাটির সাথে ১০ ফুট উচ্চতার দুটো মূলকাণ্ড তার ডালাপালাবিহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সকল মূলকাণ্ড ও ডালাপাল কেটে ফেলা হয়েছে। আমি গাছটির মালিক হান্নান হাওলাদারের সাথে কথা বলেছি, তিনি বলেছেন মাত্র ১৫০০ টাকায় গাছটি বিক্রি করেছেন। অথচ গাছটির আর্থিক মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার কথা। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করব। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘এই বটগাছটি তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। এই গাছ আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেন দেয়। গাছে পাখিরা বাসা বেঁধে থাকে। ফল খেয়ে থাকে।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘শিরখাড়ায় যে বটগাছটি স্থানীয়রা কেটে ফেলেছে। আমরা সেখানে প্রশাসনের লোক পাঠিয়েছি। যারা অভিযুক্ত তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
Post a Comment