ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা, জবির সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারা গ্রেপ্তার

 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাচেষ্টার মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।



বুধবার (২৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা এই মামলা দায়ের করেন।


গ্রেপ্তারের বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ বিকেলে ক্যাম্পাসের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, এখন পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, তিনি আজ যে ক্যাম্পাসে আসবেন আমরা অবগত ছিলাম না। যেহেতু তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবহিত নয়। শুনেছি পুলিশ ওনাকে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করেছে।


বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন (পদোন্নতি) বোর্ডে ওই শিক্ষক আনোয়ারা বেগমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।


এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মেজবাহ উল আজম সওদাগর বলেন, আপগ্রেডেশন বোর্ডের নমিনী নির্ধারণ করেন রাষ্ট্রপতি। তাকে নমিনী থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিঠি দিলেও এখনো পাস হয়নি। তবে তাকে বিভাগ থেকে ডাকা হয়নি। বোর্ড মিটিংয়ে ডাকার কোনো এখতিয়ার বিভাগের নেই। তাকে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়েছে। আজকে আমি ক্যাম্পাসেই আসি নাই। 


তার বিরুদ্ধে মামলা থাকা সত্বেও কেন তাকে কেন শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন বোর্ডের জন্য চিঠি প্রদান করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


এ বিষয়ে মামলার বাদী ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, এদের মতো দলকানা শিক্ষকদের জন্য স্বৈরাচারী আমলে শিক্ষক সমাজ কলঙ্কিত হয়েছে। উনি বলতেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তারা রাজাকার। আর যেহেতু ছাত্রদল-শিবির আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাই এরা রাজাকার। এদের গুলি করে মারা উচিত। তিনি পিএসসি’র সদস্য থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ ছাড়া কাউকে বিসিএসের জন্য উত্তীর্ণ করতেন না। ওনার মতো আওয়ামী দোসরের সঠিক বিচার দাবি করছি। কারণ ওনারা ছাত্রলীগের মাফিয়াদের পুলিশ প্রশাসনে নিযুক্ত করেছেন এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে টাকা দিয়ে ছাত্রদলসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন করিয়েছেন।


এর আগে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের ৯৪ জনসহ মোট ১৯৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।


মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বাকি উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।


এদিকে, মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষক আসামি হিসেবে আছেন। তারা হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী ও ড. আনোয়ারা বেগম, জবি নীলদলের অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদার, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাস, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ফারুক আহমেদ, অগাস্টিন পিউরিফিকেশন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু সালেহ সিকান্দার।


এ ছাড়া, আসামি ৫ কর্মকর্তা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকতা সমিতির সভাপতি কাজী মনির, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আলতাফ হোসেন ও ইমরান হোসেন ইমন, ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার পদে নিয়োজিত কর্মকর্তা টুটুল আহমেদ, জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও স্টোরকিপার সুমন হাসান সোহান।



Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post