দ্বিতীয় মেয়াদের ট্রাম্পের নির্বাচনে জয়লাভ, ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের নাম। সপ্তাহ খানেক আগ পর্যন্তও তারা ছিলেন ‘বেস্ট বাডিস’ অর্থাৎ ‘জানি দোস্ত’। ট্রাম্প ও মাস্কের এই সম্পর্কের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রোম্যান্স’ (ব্রো, ব্রাদারের সংক্ষিপ্ত রূপ + রোম্যান্স)। তবে সেই সম্পর্ক গত ১০ দিনে ধীরে ধীরে এখন দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।দ্বন্দ্বের শুরুটা হয়েছে ট্রাম্পের নতুন কর ও ব্যয় সংক্রান্ত বিলের পরিকল্পনা নিয়ে। গত ২৮ মে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই বিলটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ইলন মাস্ক। পরে ট্রাম্প জানান, বিলের কিছু দিক নিয়ে তিনি ‘খুশি নন’, তবে কর ছাঁটাইয়ের মতো কিছু অংশ নিয়ে তিনি ‘উল্লসিত’। পরদিন ২৯ মে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডোজ)’ নামের বিশেষ বিভাগ থেকে সরে আসেন মাস্ক।সরকারি খরচ কমাতে গঠিত এই বিভাগের প্রধান ছিলেন মাস্ক।
৩০ মে নিজের শেষ কর্মদিবসে হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে কালশিটে চোখ নিয়ে হাজির হন মাস্ক। সেদিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেন, মাস্ক আসলে ‘বিদায় নিচ্ছেন না’। তিনি হোয়াইট হাউজে ‘ঘন ঘন আসা-যাওয়া করবেন’ বলেও মন্তব্য করেন।
২ জুন নিজের আলোচিত অর্থনৈতিক বিল নিয়ে ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশাল’-এ পোস্টে দাবি করেন, তার ‘বড়, সুন্দর বিল’ সম্পর্কে অনেক ‘ভুল কথা’ ছড়ানো হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই কথার জবাবে পরদিন ইলন মাস্ক ওই বিলকে ‘অতিরিক্ত খরুচে’, ‘লজ্জাজনক কাণ্ড’ এবং ‘ঘৃণামুলক বিকৃতি’ বলে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। ওই দিন থেকেই মাস্কের মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে।
৪ জুন ইলন মাস্ক নতুন একটি ব্যয়বহুল বিলের আহ্বান জানান, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ও ঋণের সীমা বাড়াবে না। এদিন দুপুরে মাস্ক তার অনুসারীদের ট্রাম্পের বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস সদস্যদের ফোন দিয়ে বিরোধিতা করার আহ্বান পরদিন ৫ জুন দুপুরে ওভাল অফিসে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স-এর পাশে ট্রাম্প বলেন, মাস্কের সঙ্গে তার ‘ভালো সম্পর্ক ছিল’ কিন্তু এখন তা থাকার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তিনি জানান, মাস্ক বৈদ্যুতিক গাড়ির ভর্তুকি কমানোর কারণে অসন্তুষ্ট, যা টেসলা ও স্পেসএক্সের ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, মাস্ক বিলের ‘প্রতিটি বিষয় জানতেন’ এবং তিনি মাস্কের ওপর ‘হতাশ’।
এরপর নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে একের পর এক পোস্ট দিতে থাকেন মাস্ক। ওভাল অফিস থেকে ট্রাম্পের সরাসরি প্রচারের সময় মাস্ক ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে পোস্ট করেন। তিনি লিখেন, মিথ্যা। আমাকে কখনো বিলটি দেখানো হয়নি, ‘আর এটি রাতের অন্ধকারে এত দ্রুত পাস হয়েছে যে প্রায় কেউই কংগ্রেসে পড়েনি।’ তিনি বলেন, ‘এই ভয়ংকর বিল বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাবে।’
এদিন ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়ে বলেন, মাস্ক হোয়াইট হাউজে থাকতে থাকতে ‘অসহনীয়’ হয়ে উঠেছিল, তার ইলেক্ট্রিক গাড়ির ম্যান্ডেন্ট বাতিল করব; যার কারণে সবাই ইলেকট্রিক গাড়ি কিনতে বাধ্য হচ্ছিল; বুঝতে পেরে সে ‘পাগল হয়ে গিয়েছিল’। ট্রাম্প আরো লেখেন, 'আমাদের বাজেট বাঁচানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো মাস্কের সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিল করা।’
মাস্ক অভিযোগ করেন, ট্রাম্প-এর নাম ‘এপস্টাইন ফাইল’-এ উল্লেখ আছে। ‘এপস্টাইন ফাইলস’ হল মার্কিন ফেডারেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সংকলিত নথির একটি সংগ্রহ যা বর্তমানে দোষী সাব্যস্ত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের অপরাধের তদন্তের সময় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘মাস্ক আমার বিরুদ্ধে যাই বলুক, আমি কিছু মনে করি না’ এবং তার বিলের পক্ষে অবস্থান ধরে রাখেন। পরে ট্রাম্প বলেন, বাজেটের অর্থ সঞ্চয় করার সবচেয়ে সহজ পথ ইলনের কোম্পানিকে দেওয়া কন্ট্রাক্ট ও ভর্তুকি বাতিল করা।
জবাবে ইলন মাস্ক ‘তৎক্ষণাৎ’ ড্রাগন স্পেসক্রাফট (আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার জাহাজ) বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
পরে অবশ্য কিছুটা নমনীয় হওয়া ইঙ্গিত দিয়েছেন ইলন মাস্ক। বিল আকম্যানের মন্তব্য যেখানে তিনি দুজনকে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন, সেটি শেয়ার করে মাস্ক লিখেছেন, আপনি ভুল বলেননি।
তবে পিছু হটেননি ট্রাম্প। এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প মাস্ককে ‘একজন মানসিক ভারসাম্য হারানো ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মাস্কের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ ‘বিশেষ নেই'জানান।
Post a Comment