জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ইমরান মারা গেছেন

 


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ইমরান হোসেন (২৬) মারা গেছেন। শুক্রবার রাত ১২টার দিকে গাজীপুরের ভাড়া বাসায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরে রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলের মুশলী ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে আনা হয়। শনিবার দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।জানা যায়, ইমরান হোসেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশলী ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের ইসলাম ইমুদ্দিনের ছেলে। স্ত্রী ও ১৮ মাসের সন্তান নিয়ে গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় থাকতেন। গত প্রায় ৭ বছর ধরে তিনি পাশের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। মাঝেমধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসতেন।পরিবারের লোকজন জানায়, গত বছরের ২৮ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে ইমরান আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এক ধরনের ভয়ে গোপনে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এর পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে শরীর থেকে বেশ কিছু গুলি বের করলেও যন্ত্রণা কমছিল না। এভাবেই কর্মস্থলে গিয়ে কাজকর্ম করতে থাকেন।ইমরানের স্ত্রী রিতা আক্তার জানান, তার স্বামী ইমরান অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির একজন মানুষ ছিলেন। সারা দেশ যখন আন্দোলনে সরগরম তখন তিনিও রাজপথে যান। ওই সময় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছেন। জুলাই যুদ্ধে আহত হলেও নিজেকে কখনো জাহির করতেন না। সব সময় বলতেন নতুন একটা দেশ তো পেয়েছি।মাঝেমধ্যে ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেলেও কেউ কখনো খবর নেয়নি। টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করানো যায়নি। তার সাথে যারা আহত ও নিহত হয়েছিল তারা সবাই তালিকাভুক্ত ছাড়াও সরকারের সব ধরনের অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু তার স্বামীর কেউ খবর নেয়নি। এটা ছিল তার স্বামীর এক ধরনের আক্ষেপ ও কষ্ট।

বাবা ইসলাম ইমুদ্দিন বলেন, ‘বেহেই কইছে আমার ছেড়া যুদ্ধ কইর‌্যা আহত অইছে। অহন সরকার খোঁজ খবর নিবো এমনকি অনেক কিছু দিবো। কিন্তু গত ১১ মাসে একটা বারের লাইগ্যাও কেউ আমার খোঁজ নিলো না। ছেড়াডা অসুখ লইয়া ঈদও বাড়িত আইছিন। পরদিনই চইল্যা গেছে। যাওনের সময় কইয়া গেছে আরেকবার আইলে ঘরডা ঠিকঠাক করবো। অহন হে তো আর বাড়িত আইতো না।’


ইমরানের ভগ্নিপতি খোকন মিয়া বলেন, ‘তার শ্যালকের বুকে দুটি, চোখে একটি ছাড়াও শরীরের অনেক জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়। চলমান আন্দোলনের সময় হাসপাতালে গেলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসা করানো হয় নিজেদের খরচে। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো যায়নি। এতে দিন দিন সে খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তবু তার মনোবল ছিল অটুট। কারো কাছে গিয়ে নিজের নামের তালিকা করবে, এটা ছিল তার লজ্জার বিষয়। এমনি মনমানসিকতা ছিল তার।’


নিহত ইমরানের ভাই মো. ইব্রাহিম জানান, তার ভাইকে জয়দেবপুর হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা করানোর পর সেখান থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বিধায় করা হয়। এর পর থেকে নানা জায়গায় চিকিৎসা করানো হচ্ছিল।


ইমরান মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার গ্রামের বাড়িতে যান এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, চিকিৎসার সকল কাগজ দেখে শতভাগ নিশ্চিত ইমরান একজন জুলাই যোদ্ধা। তালিকায় নাম থাকলেও এখন সংশ্লিষ্ট জায়গায় আবেদন কনান্দাইল উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি মো. ফয়জুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি ইমরানের বাড়িতে যান। সেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। পরে আহতের সময় হাসপাতালের চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বেশ কিছু কাগজপত্র দেখানো হয়। এতে প্রমাণ হয় ইমরান জুলাই যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন।রা হবে।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post