তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামের বৃদ্ধ সমির উদ্দিন মণ্ডল জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বিষধর সাপের সঙ্গে। ভয় নয়, ছিল ভালোবাসা আর একধরনের টান। তাই হয়তো জীবনের শেষবেলায়ও তিনি ছুটে যান হাসপাতালে। তবে নিজের জন্য নয়, তাঁর সংগ্রহে থাকা সাপের জন্য।
গতকাল শনিবার দুপুরে একটি প্লাস্টিকের বস্তা হাতে করে সমির মণ্ডল হাজির হন তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই সাপটার জ্বর হয়েছে।’ চিকিৎসকেরা বিস্মিত হন, তাঁকে বুঝিয়ে বলেন, এটি প্রাণিসম্পদের দেখার বিষয়। এ সময় হাসপাতাল থেকে চলে যান সমিএই গল্পের শেষটা ছিল করুণ। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে সমির মণ্ডল তাঁর সংগ্রহে থাকা গোখরা সাপ নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছিলেন। আচমকাই সাপটি ছোবল দেয়। সাপের বিষে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন সমির। তাঁকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে পথিমধ্যে মারা যান।
সমির উদ্দিন মণ্ডলের ভাতিজা মেহেদী হাসান বলেন, ‘সমির চাচা ছোটবেলা থেকে সাপ ধরতেন, ঝাড়ফুঁক করতেন। সাপ ধরে সৈয়দপুরে বিক্রি করতেন। কেউ দেখতে চাইলে দেখাতেন। আজ সাপ নিয়ে তিনি বাইরে কাকে যেন দেখাতে যান। বস্তা থেকে বের করার সময় চাচাকে ছোবল দেয়। কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে এলে তাঁকে তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে থেকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। চাচার লাশ এনে বাদ আসর আমরা দাফন করেছিমেয়ে ও নাতিদের নিয়ে ছিল সমির উদ্দিনের সংসার। সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িজুড়ে চলছে মাতম। নানা সমিরকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ নাতি সাইফুল ইসলাম। সমির উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে এলাকার সব জায়গাতেই চলছে আলোচনা। প্রতিবেশী রেজাউল করিম বলেন, সমির মণ্ডল ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রাণিপ্রেমিক। সাপ ছিল তাঁর সন্তানতুল্য। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, নিজের প্রিয় সাপই একদিন উনার মৃত্যু ডেকে আনবে।
আরেক প্রতিবেশী এনামুল হক বলেন, সমির মণ্ডল সাপের জ্বর নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, সেই মানুষটাই আজ নিজেই সাপের কামড়ে চিরবিদায় নিলেন। সমির মণ্ডলের মৃত্যু শুধু একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা নয়, এটি যেন এক জীবনভর ভালোবাসা আর বিশ্বাসের পরিসমাপ্তিতারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হামদুল্লাহ বলেন, ‘সাপের দংশনের শিকার হওয়া বৃদ্ধ হাসপাতালে এসেছিলেন। শুনেছি তিনি মারা গেছেন।’।।’র।
Post a Comment