কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কোরআন ও হাদিসের দোয়াসমূহ

কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কোরআন ও হাদিসের দোয়াসমূহ



কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছেই দোয়া করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লেই আল্লাহর দরবারে একান্তভাবে প্রার্থনা করতেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য অনেক সংক্ষিপ্ত ও সহজ দোয়া পাওয়া যায়, যেগুলো সহজেই মুখস্থ করা সম্ভব। যেমনভাবে আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত আহারের প্রয়োজন, তেমনি আত্মা বা হৃদয়কে জীবিত ও প্রশান্ত রাখার জন্য প্রয়োজন জিকির তথা আল্লাহর স্মরণ। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হইও না।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫২)


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না—‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মা’আস্মিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা’ই ও হুয়াস সামীয়ুল আলিম।’ অর্থ: আল্লাহর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না; তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)


হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) যখন কোনো গোষ্ঠীর হাতে ক্ষতির আশঙ্কা করতেন, তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহূরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম।’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তাদের মোকাবেলায় তোমাকেই সামনে রাখছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবু দাউদ ও নাসাঈ হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যখন কারও ওপর কোনো বিপদ আসে, সে যেন বলে—‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফলি খাইরাম মিনহা।’

অর্থ: আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চয়ই তাঁর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমার এই বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও এবং এর চেয়ে উত্তম কিছু দিয়ে আমাকে প্রতিস্থাপন করো। (মুসলিম).

রাসুল (সা.) বিপদের সময় পড়তেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল হাকীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহনশীল ও সর্বজ্ঞ; তিনি মহা আরশের প্রভু; তিনিই আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং সম্মানিত আরশের মালিক।(বুখারি ও মুসলিম).

নবীজি (সা.) আরও বলেন, বিপদের সময় এই দোয়া পাঠ করা উচিত, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্জোয়ালিমিন।’

অর্থ: তুমিই একমাত্র উপাস্য, তুমি পবিত্র, আমি অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম। (তিরমিজি: ৩৫০০)


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, ‘আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা’আলতাহু সাহলা, ওয়া আনতা তাজআলুল হুযনা সাহলান ইজা শিইতা।’

অর্থ: হে আল্লাহ! কোনো বিষয়ই সহজ নয়, কিন্তু তুমি যেটিকে সহজ করো, সেটিই সহজ হয়। তুমি চাইলে কঠিন কাজও সহজ করে দিতে পারো। (ইবনে হিব্বান: ৯৭৪)


দোয়া কবুলের জন্য কিছু শর্ত বা আদব রয়েছে, যেগুলো মনে রাখা জরুরি—


পবিত্রতা: ওজু বা গোসলের মাধ্যমে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করা।

বিনয় ও নম্রতা: দোয়া যেন হয় বিনীত কণ্ঠে ও আন্তরিকভাবে।

আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরিফ: দোয়ার শুরুতে ও শেষে দরুদ শরিফ পাঠ করা উত্তম।

ইসমে আজম: আল্লাহর কোনো বিশেষ নামে দোয়া করলে তা দ্রুত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মহামারি বা সংক্রামক ব্যাধির সময় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি মহামারি এলাকায় থাকো, তাহলে বাইরে যেও না। আর বাইরে থাকলে আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করো না।’ (বুখারি ও মুসলিম)


নবীজি (সা.) বলেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’, এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’ এ ছাড়াও নিয়মিত পড়া যেতে পারে, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আল্লাহর কাছে দোয়া করার আগে দরুদ শরিফ পাঠ করবেন এবং দোয়ার শেষে আবার দরুদ শরিফ পাঠ করে শেষ করবেন।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post