দাম্পত্যজীবনে সুখী হতে কে-না চায়। অসুখী হলে জীবনটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাই সুখময় জীবন পেতে প্রাণপণ চেষ্টা করে মানুষ।সুখ-শান্তি ও প্রেমময় দাম্পত্যজীবন পেতে মানুষ কি-না করে। শতকষ্ট-ক্লেশ পাড়ি দিয়ে দিনশেষে কামনা করে সুখময় একটি শান্তির সংসার। শান্তির নবী, প্রিয় নবী, মুহাম্মদ (সা.)-এর ১০ নির্দেশনা মানলেই দাম্পত্যজীবনে পরস্পরে প্রেম-ভালোবাসা অনুরাগ সৃষ্টি হবে। সুখময় জীবন সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সম্পূরক হয়ে উঠবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘স্ত্রীরা তোমাদের পোশাক আর তোমরা তাদের পোশাক’। (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৭)
স্বামীর আনুগত্যেই স্ত্রীর জান্নাত
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজান মাসের রোজা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে আর স্বামীর অনুগত থাকে, তাকে বলা হবে তুমি যে দরজা দিয়ে চাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমদ: হাদিসবিপরীতে ‘যে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে ভালো আচরণ করে না, স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তার সম্পর্কে হাদিসে এসেছে ‘তার কোনো নামাজ কবুল হয় না, কোনো নেক আমল উপরে ওঠানো হয় না যতক্ষণ স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হবে। (ইবনে হিববান: হাদিস ৫৩৫৫)স্ত্রীর মন রক্ষা করে চলা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দিয়ে। তুমি যদি তাকে সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙে ফেলবে। তাই তার মন রক্ষা করে চল। তাহলেই একসাথে জীবনযাপন করতে পারবে।’ (ইবনে হিববান: হাদিস ৪১৭৮) হাদিসের বিশুদ্ধ গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে আরেকটি হাদিস রয়েছে ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর। কেননা তাদেরকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাঁকা হলো উপরেরটি। সুতরাং তুমি যদি তা সোজা করতে যাও তাহলে ভেঙে ফেলবে। আর যদি একেবারে ছেড়ে দাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে। তাই স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ কর।’ (বুখারি ৩৩৩১, মুসলিম ৩৫১৫)
স্ত্রীর প্রশংসা করা
রাসুল (সা.) স্ত্রীদের প্রশংসা করতেন। ভালো কাজের জন্য শুকরিয়া জানাতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলের (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে থেকে খাদিজার (রা.) চেয়ে অন্য কোনো স্ত্রীর প্রতি বেশি ঈর্ষাপোষণ করিনি। কারণ, রাসুল (সা.) প্রায় তার কথা স্মরণ করতেন এবং তার প্রশংসা করতেন।’ (বুখারি ৫২২৯)
দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা
আমরা অনেক সময় অন্যের কাছে নিজের প্রিয় মানুষের সমালোচনা করে বেড়াই। এতে সংসারে কলহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয় এবং সুখ-শান্তি চলে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সুরা হুমাজাহ ১)
গোপনীয়তা ফাঁস না করা
স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস জঘন্যতম পাপ। নিজেদের একান্ত বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করা গর্হিত অপরাধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট পর্যায়ের যে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সঙ্গে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়।’ (মুসলিম ৩৪৩৪)
শুধু স্বামীর জন্য সাজগোজ
পুরুষরা তাদের সঙ্গিনীকে সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। ঠিক একইভাবে তারা তাদের সঙ্গীকেও সুন্দরভাবে দেখতে পছন্দ করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীদের জন্য এমনই পরিপাটি থাকা পছন্দ করি, যেমন আমি তাদের ক্ষেত্রে সাজগোজ করে থাকতে পছন্দ করি’। (বায়হাকি ১৪৭২৮)
ঘরের কাজে সহযোগিতা করা
স্বামীরা সাধারণত বাইরেই থাকেন। কর্মব্যস্ত থাকেন। তা সত্ত্বেও যখনই ঘরে ফিরবেন তখন একটু সময় বের করে চেষ্টা করবেন স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতে। এতে সে বেশি খুশি হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনটিতে দুজনে ঘর গোছানোর কাজ শেয়ার করে নিন।
অন্য দিনগুলোতে স্ত্রীরও বোঝা উচিত বাইর থেকে কাজ করে এসে অনেক সময় কাজ করার মানসিকতা-শক্তি না-ও থাকতে পারে। স্বামীকে কাজের প্রেশার না দেয়া।
হজরত আসওয়াদ (রহ.) বলেন, আমি হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সা.) ঘরে থাকাবস্থায় কী করতেন তিনি বললেন, ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিজনের সহায়তা করতেন। আর নামাজের সময় হলে নামাজে চলে যেতেন’। (বুখারি ৬৭৬)
সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীর জন্য কেনাকাটা করা
স্ত্রীর জন্য সামর্থ্যানুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করুন। এ ক্ষেত্রে কৃপণতা পরিহার করে সওয়াবের আশা রাখুন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সওয়াবের আশায় কোনো মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের প্রতি ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেকখনোই গায়ে হাত তুলবে না
স্ত্রীদের মারধর করা চরম অন্যায় আর নিম্ন মানসিকতার পরিচয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যামআ (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদের গোলামের মতো প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো মিলিত হবে।’ (বুখারি ৫২০৪)
স্ত্রীকে মুচকি হাসি উপহার দিন, প্রেমময় নামে ডাকুন
স্ত্রী যখনই আপনার সামনে আসবে তখনই তাকে মুচকি হাসি দিয়ে সম্ভাষণ জানান। স্ত্রীকে সুন্দর নামে ডাকুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ভালোবেসে কখনও কখনও আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন। (ইবনে মাজাহ ২৪৭৪)।বে গণ্য হয়।’ (বুখারি ৫৩৫১) ১৬৬১)
Post a Comment