সকালে কলেজছাত্র, বিকেলে তিনি বিক্রি করেন চা

 


নিজের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে বাগেরহাট শহরের অলি-গলিতে একবেলা করে চা-কফি বিক্রি করেন বাগেরহাট সদর উপজেলার কচুয়ার মোঘিয়া ইউনিয়নের ছোট আন্ধারমানিক গ্রামের এক সংগ্রামী তরুণ উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি সরকারি পিসি কলেজের অনার্স গণিত প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪) শিক্ষার্থী।



অভাব-অনটনের সংসারে বাবার চিকিৎসা নিজের পড়াশোনা এবং পরিবারের খরচ মেটাতে তিনি প্রতিদিন বিকেলে কাঁধে নিয়ে বের হন থার্মোফ্লাস্ক ভর্তি চা ও কফি। তার এই কফি শপে কফি তৈরির সব সরঞ্জাম, তার পোশাকের সঙ্গেই আটকানো থাএর জন্য উজ্জ্বল ব্যবহার করেন বিশেষ ধরনের একটি জ্যাকেট। সেখানে বুকের সামনে লাগানো থাকে গরম পানির ফ্লাস্ক। জ্যাকেটের কোনো পকেটে থাকে কফির পাতা, কোনো পকেটে দুধ, কোনো পকেটে চিনি। জ্যাকেটের এক পাশে আবার লাগানো থাকে কফির কাপ। এভাবে ফেরি করে কফি তৈরির সব সরঞ্জাম শরীরে নিয়ে হেঁটে বিক্রি করেন চা-কফি।



উজ্জ্বলের বাবা বিষ্ণুপদ মুখোপাধ্যায় (৭৫) ছিলেন তালা-চাবির কাজের কারিগর। এখন বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি আর কাজ করতে পারেন না। মা কাজল রানী মুখোপাধ্যায় গৃহিণী। চার বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মা-বাবার একমাত্র ভরসা উজ্জ্বল। পরিবারের এই দায়িত্বভার নিজের কাঁধে নিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখেন পড়াশোনা শেষ করে নিজের অবস্থান গড়ে তোলাউজ্জ্বল বাগেরহাট শহরের নূর মসজিদ এলাকা থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাগেরহাট শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন ব্ল্যাক কফি ও দুধ কফি। ব্ল্যাক কফি ৮ টাকা দুধ কফি ২০ টাকা। দিনে লাভ হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এই আয় দিয়েই তিনি চালান নিজের পড়াশোনার খরচ এবং বাসার বাজার। স্থানীয় দোকানদার ও ক্রেতারাও তার পরিশ্রম ও লড়াইকে সম্মান জানিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন।



শহরের ফলপট্টি মোড়ের সৌখিন কসমেটিকসের বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, উজ্জ্বলের কফির স্বাদ যেমন ভালো ওর জীবন সংগ্রামের গল্পটা আরও অনুপ্রেরণাদায়ক। একজন ছাত্র হয়ে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কাজ করা সহজ নয়। আমি চেষ্টা করি, নিয়মিত ওর কাছ থেকে কফি নিয়ে কিছুটা সাহায্য করতে।



কলেজছাত্র উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, বাবার বয়স সত্তরের ঊর্ধ্বে হয়েছে এখন কিছুই করতে পারেন না। সংসারের অবস্থা খুব খারাপ। আমি পড়াশোনা ছাড়তে চাই না, তাই বিকেলে কফি বিক্রি করি। এই আয় দিয়েই কোনোমতে পড়াশোনার খরচ, বই-খাতা, টিউশন ফি, আর বাসার বাজার চালাই যতটা পারছি লড়ে যাচ্ছি। কেউ কিছু কিনলে শুধু উপার্জন নয়, সাহসও পাই। আমি চাই বাবা-মা বেঁচে থাকতে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে। আমার কাছে এই রাস্তায় রাস্তায় কফি বিক্রি করা লজ্জা লাগে না কারণ আমি গরিব ঘরের সন্তান।



সরকারি পিসি কলেজের গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, উজ্জ্বল আমাদের কলেজেরই ছাত্র ও অনেক মেধাবী। আমি ওর সংগ্রামের কথা শুনেছি। সত্যি বলতে এ ধরনের ছেলেরা সমাজের জন্য উদাহরণ। আমরা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাকে সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনা করব। তার মতো সংগ্রামী তরুণদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা যদি ওর পাশে এখন না দাঁড়ায় তাহলে দাঁড়াবে কে। আমি একজন শিক্ষক হিসেবে ওর পাশে সব সময় বাবা-মায়ের মতো পাশে থাকব।র।কে।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post