মেঘ বিস্ফোরণ কী, কেন হয়?

 ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় একটি গ্রাম কর্দমাক্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০০ জনের বেশি নিখোঁজ। একই ধরনের ঘটনা পাকিস্তানের পাহাড়ি এলাকাতেও ঘটেছে, যেখানে মৃতের সংখ্যা আড়াইশোরও বেশি। একাধিক পরিবারে এমন ঘটেছে যে, মরদেহ দাফনের মতো বেঁচে থাকা কোনো সদস্য নেই।


এই আকস্মিক বন্যার পেছনের কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছে ক্লাউডবার্স্ট বা ‘মেঘ বিস্ফোরণ’। এটি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে ঘটে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেখানে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে প্রচণ্ড বৃষ্টি নামে। এর ফলে হঠাৎ বন্যা, ভূমিধস ও কাদাধস সৃষ্টি হয়।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, মেঘ বিস্ফোরণের পেছনে বায়ুমণ্ডলীয় জটিল মিথস্ক্রিয়া দায়ী। আর্দ্র বাতাস পাহাড়ি অঞ্চলে উঠে ঠান্ডা হয়ে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি করে। মেঘ ভারী হয়ে ফেটে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিপর্যয় এই প্রক্রিয়ার প্রকোপ বাড়াচ্ছে।


অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির আবহাওয়াবিদ রুচিত কুলকার্নি জানান, বর্ষার সময় হিমালয়ের পাদদেশে আরব সাগর থেকে আসা আর্দ্র বাতাস পাহাড়ের কারণে ওপরে উঠে ‘অরোগ্রাফিক লিফট’ সৃষ্টি করে, যা বিশাল কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি করে। সাধারণ সমতল অঞ্চলের বৃষ্টির তুলনায় পাহাড়ি এলাকায় এই ধরনের বৃষ্টি অনেক দ্রুত ও ভারী হয়।


মেঘ বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস সম্ভব নয়। আবহাওয়া অধিদফতর সাধারণত অতিবৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারে, তবে এত স্বল্প এলাকায় এবং অল্প সময়ের ঘটনাগুলোর জন্য সতর্কবার্তা দেয়া এখনও প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন।


২০১৩ সালের জুনে ভারতের উত্তরাখন্ডের কেদারনাথেও মেঘ বিস্ফোরণের কারণে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, যা ৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post