ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে নিজেই করুন পরীক্ষা:জেনে নিন ৫টি কার্যকর উপায়

 বিশ্বব্যাপী নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে ক্যানসারের ধরনগুলির একটি হলো ব্রেস্ট ক্যানসার। এ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় সাফল্যের হার বহুগুণ বেড়ে যায়। আর সেই কারণে নিয়মিত নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে বসেই সহজ কিছু কৌশলের মাধ্যমে নারীরা ব্রেস্টে ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারেন। নিচে দেওয়া হলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি ও কখন এ পরীক্ষা করা সবচেয়ে কার্যকর হবে তার বিস্তারিত।


চোখে দেখে পরীক্ষা

ব্রেস্ট পরীক্ষার প্রথম ধাপ হলো ভিজ্যুয়াল ইন্সপেকশন বা চোখে দেখে পরীক্ষা করা। আয়নার সামনে কোমর পর্যন্ত পোশাক খুলে দাঁড়িয়ে প্রথমে হাত স্বাভাবিকভাবে নামিয়ে দিন। এবার লক্ষ্য করুন ব্রেস্টের আকার, আয়তন বা গঠনে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। ডিম্পল পড়া, চামড়া টান টান হয়ে যাওয়া, লালচে ভাব, ফোলা বা কোনো গুটি চোখে পড়ছে কি না তা খেয়াল করুন। এরপর দুই হাত মাথার ওপরে তুলুন এবং পুনরায় ব্রেস্টে কোনো পরিবর্তন আছে কি না দেখুন। এছাড়া হাত কোমরে রেখে বুকের পেশি টানটান করলে ব্রেস্টের বাইরের স্তর আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এ সময় নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া বা অস্বাভাবিক রস নিঃসরণের লক্ষণ খুঁজে দেখতে হশুয়ে থেকে হাতে পরীক্ষা

শুয়ে থাকার সময় ব্রেস্ট টিস্যু সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে পরীক্ষার জন্য বুকের দেয়াল সহজলভ্য হয়। তিনটি আঙুলের মাথা ব্যবহার করে ছোট ছোট বৃত্তাকার চাপ দিন। এতে পুরো ব্রেস্ট ও বগল পর্যন্ত অংশ ভালোভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব। পরীক্ষাকে পদ্ধতিগত করার জন্য ব্রেস্টকে ঘড়ির কাঁটার মতো ভাগ করে নিতে পারেন। হালকা, মাঝারি ও গভীর—এই তিন মাত্রায় চাপ প্রয়োগ করে ভেতরের স্তর পর্যন্ত পরীক্ষা করতে হবে। কোনো গুটি, শক্ত হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক অংশ আছে কি না তা খুঁজে দেখুন। নিপলে হালকা চাপ দিয়ে অস্বাভাবিক নিঃসরণ হচ্ছে কি না তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে অপর ব্রেস্টও পরীক্ষা করতে হবে।


শাওয়ারের সময় পরীক্ষা

অনেক নারীর জন্য ভেজা ও পিচ্ছিল ত্বকে পরীক্ষা করা সহজ হয়। গোসল করার সময় এক হাত ওপরে তুলে অন্য হাতের আঙুল দিয়ে পুরো ব্রেস্ট ও বগল স্পর্শ করে পরীক্ষা করুন। বৃত্তাকার গতিতে চাপ দিয়ে হালকা থেকে গভীর চাপ পর্যন্ত প্রয়োগ করুন। গরম পানি ও ভেজা ত্বক এ পরীক্ষাকে আরও কার্যকর করে তোলে। ফলে প্রতিদিনের শাওয়ারের সময় সহজেই নিয়মিত পরীক্ষা করা সম্ভব।


নিপলের পরিবর্তন ও নিঃসরণ খেয়াল করা

নিপল ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে, তাই আলাদা করে পরীক্ষা করা জরুরি। লক্ষ্য করুন নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে কি না, রঙ বা আকারে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। স্বাভাবিক দুধ ছাড়া স্বচ্ছ তরল, রক্ত মিশ্রিত বা অস্বাভাবিক রঙের নিঃসরণ হলে তা অবশ্যই সতর্কবার্তা হতে পারে। হালকা চাপ দিয়ে পরীক্ষা করুন কোনো তরল বের হচ্ছে কি না। এসব পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


কখন পরীক্ষা করবেন

ব্রেস্ট সেলফ-এক্সামের কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে সঠিক সময়ের ওপর। যারা নিয়মিত মাসিক হন, তাঁদের মাসিক শুরুর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করা উচিত। এ সময় ব্রেস্ট তুলনামূলক কম সংবেদনশীল ও নরম থাকে। যারা মাসিক হন না, তাঁরা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটি দিন বেছে নিতে পারেন, যেমন মাসের প্রথম দিন। মাসে অন্তত একবার এ পরীক্ষা করলে ব্রেস্ট টিস্যুর স্বাভাবিক গঠন সম্পর্কে অভ্যস্ত হওয়া যায় এবং অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন সহজেই ধরা পড়ে।


নিয়মিত ব্রেস্ট সেলফ-এক্সাম নারীদের জন্য শুধু সচেতনতার অংশ নয়, বরং ব্রেস্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি কার্যকর অস্ত্র। তাই প্রতি মাসে নিজেকে সময় দিন এবং সুস্থতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিন।বে।

Post a Comment

Previous Post Next Post