আজ রাতের পরিস্থিতি নিয়ে আশা না-কি আশঙ্কায় থাকব
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে এক আল্টিমেটাম শেষ হলো আজ সোমবার। প্রায় কাছকাছি সময়ের আরেকটি আল্টিমেটাম এসে হাজির। এবারও ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম। শেষ হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে নতুন কর্মসূচির ঘোষণাও আছে। আর এই সবের মধ্যে বসে অনেকটা রোম সম্রাট নিরোর মতো করেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন–আইন‑শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক।স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সদা হাস্যোজ্জ্বল। এটা আমাদের আশ্বস্ত করে বৈকী। কারণ, এমন চাপের একটি মন্ত্রণালয় সামলাতে এ হেন দৃঢ় স্নায়ুর মানুষই তো দরকার। এই দৃঢ়তা তিনি দেখাচ্ছেনও। কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। আইন‑শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘সন্তোষজনক’–এই ভাষ্যে তিনি বেশ দৃঢ়ভাবেই অবস্থান করছেন। এমনকি এতটাই দৃঢ় যে, তিনি বিষয়টি জানাতে মধ্যরাতে সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলনও করেন। মধ্যরাত বললে কেউ কেউ রাত ১২টা বুঝতে পারেন। তাই খোলাখুলি বলা ভালো যে, তিনি রাত ৩টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে দেশের আইন‑শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। কী কথা? না তেমন নতুন কিছু নয়, ফ্যাসিবাদের দোসরেরা দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। মানে সেই ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব! এদিকে একের পর এক ছিনতাই, ডাকাতি, ডাকাতি করতে গিয়ে বাসে থাকা নারীদের ‘শ্লীলতাহানী’, ছবি তুলতে গিয়ে স্টুডিওতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর ধর্ষণের শিকার হওয়া, ফরিদপুরে গৃহবধূ ধর্ষণ, মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়া, পথচলতি নারীদের নানাভাবে হেনস্তার শিকার হওয়া–চলছেই।
বিষয়টি এমন এক জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে যে, গতকাল রোববার ধানমন্ডির শঙ্করে এক মসজিদ থেকে ‘ডাকাত পড়ার’ আশঙ্কায় মাইকিং করা হয়েছে। বিষয়টিকে আর অতি উৎসাহী কারও কাজ বলে একপাশে সরিয়ে রাখার সুযোগ নেই। কারণ, এমন ডাকাতির খবর রোজ সংবাদমাধ্যমে আসছে। ছিনতাই এক রকম নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। ভোর ও রাত তো বটেই দিনের বেলাও মানুষ শঙ্কা নিয়ে পথে নামছে। যে আইন‑শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাগরিকদের মনে নিরাপত্তার বোধটি দেবে, তাদের শীর্ষ এক কর্তাই কিছুদিন আগে নিজের মোবাইল, টাকা‑পয়সা নিজে হেফাজত করার দাওয়াই দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। ওই পর্যন্তই। উন্নতি কিন্তু হয়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে মানুষের মধ্যে অনিরাপত্তা বোধটা টের পাওয়া যায়। অনেকেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিরাপদ থাকতে কিছু দাওয়াই হাজির করছেন। অজস্র পোস্ট চোখে পড়ছে, যেখানে লেখা–ছিনতাইকারী ধরলে কোনো তর্ক বা চেষ্টা ছাড়াই নিজের কাছে থাকা সবকিছু দিয়ে দিতে। এমনকি মোবাইল, ঘড়ি ইত্যাদি জরুরি সরঞ্জাম ঘরে রেখে বের হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন কেউ কেউ। এ ধরনের পরামর্শ সম্বলিত পোস্টকে হয়তো অনেকে আতঙ্ক ছড়ানোর অপতৎপরতা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবে যে, পুলিশের বড় কর্তার পরামর্শটি তাঁরা কীভাবে দেখবেন? এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠার মধ্যে। আজ সোমবার দুপুরে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে। এর আগে সারা দেশে ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে গতকাল মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আজ বেলা একটার মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এই পদত্যাগের দাবি ও সে সম্পর্কিত আল্টিমেটামের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। ৫৩ বছরে কোনো মিডিয়া কখনও বলেনি। পরিস্থিতি আগের মতোই। তবে সন্তোষজনক। ছোটখাটো ঘটনা ঘটছে।’ সোমবার সচিবালয়ে কোর কমিটির সভা শেষে করা এই মন্তব্যের সঙ্গে তিনি জুড়ে দিয়েছেন–‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো করার জন্য বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ রাতে দেখবেন পরিস্থিতি কী হয়।’
শুনে একই সঙ্গে শিহরণ জাগে, আবার সর্বাঙ্গ হিমও হয়ে আসে। কী জানি, কী হয়!

Post a Comment