জোড়া লাগানো যমজ শিশু আলাদা হলো অস্ত্রোপচারে

 


চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমবারের মতো জোড়া লাগানো যমজ শিশুর সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর দুই নবজাতকই সুস্থ রয়েছে।


৬ মে নগরের অ্যাপোলো ইমপিরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় যমজ এই শিশুদের। পরদিন ৭ মে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়।


সাতকানিয়ার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম যমজ এই সন্তানদের জন্ম দেন। দুই শিশুর নাম রাখা হয়েছে রিয়াশাদ জাফর চৌধুরী ও রেনিশ জাফর চৌধুরী।


বৃহস্পতিবার (২৯ মে) নবজাতক দুটিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নগরের অ্যাপোলো ইমপিরিয়াল হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।


অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন শিশু সার্জন আদনান ওয়ালিদ। তিনি জানান, এটি তার প্রথম এ ধরনের অস্ত্রোপচার হলেও আগে ঢাকায় শিশু শিফা ও রিফাকে আলাদা করার সময় তিনি পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিলেন। এবার তিনি পুরো চিকিৎসা দলের নেতৃত্ব দেন। এটি ছিল অত্যন্ত জটিল একটি অস্ত্রোপচার। দুই নবজাতকের বুক ও পেটের অংশ প্রায় আড়াই ইঞ্চি পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল। শ্বাসনালির একটি অংশও একসঙ্গে ছিল। আমরা ঝুঁকি নিয়েই অস্ত্রোপচার করেছি। অবেদনবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন চিকিৎসক এতে অংশ নেন এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে।


প্রসূতি বিশেষজ্ঞ রেশমা শারমিন বলেন, ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে শিশু দুটি জোড়া লাগানো বলে ধরা পড়ে। পরে আরও দুবার আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হন চিকিৎসকেরা। গর্ভাবস্থায় এক শিশুর রক্ত সঞ্চালন কম পাওয়ায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। ৩৪ সপ্তাহে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় শিশু দুটিকে। জন্মের সময় তাদের ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম। বর্তমানে ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রামে।


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহেদ মালেক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন, ডেপুটি চিফ অব মেডিকেল সার্ভিসেস ফজল-ই-আকবর ও অবেদনবিদ মো. মাসুদ। অস্ত্রোপচারে কী পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


ওয়াহেদ মালেক বলেন, চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো এমন একটি জটিল অস্ত্রোপচার সফলভাবে করতে পেরে আমরা গর্বিত। জোড়া লাগানো শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক সময় অপারেশনের পরও তাদের বাঁচানো যায় না। তবে আমাদের নবজাতক দুটি সুস্থ আছে।


সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিশুদের বাবা, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী রিয়াদ জাফর চৌধুরী। তিনি বলেন, ২৮ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাফিতে যখন বিষয়টি ধরা পড়ে, তখন থেকে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। চিকিৎসকেরা সাহস জুগিয়েছেন, তাদের কারণেই আমরা এই অস্ত্রোপচারে সম্মত হই। এখন আমরা দুই সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।


শিশুদের মা সুরাইয়া বেগম বলেন, মনে হয়েছিল মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। পরে চিকিৎসকদের আন্তরিকতা ও সাহস দেখে আমরা ধীরে ধীরে ভরসা পাই। তাদের জন্যই আজ আমাদের সন্তান দুটিকে নিয়ে বাসায় ফিরতে পারছি।


Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post