নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীতে জেগে উঠা ‘দিয়ার বাহাদুরপুর’ চর ও পাবনা ঈশ্বরদীর ‘সাঁড়া বামনদিয়া চর’ দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা, ভাঙচুর ও গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় গুলি বিনিময় হয়। এ সময় ঈশ্বরদীর ইসলাম পাড়ায় পদ্মা নদীর বালু মহালের একটি পেলুডার, একটি ডাম্প ট্রাক ও টংঘর ভাঙচুরসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছেঘটনায় নদী এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূরস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিয়ার বাহাদুরপুর চরের বালু মহাল থেকে কেনা বালু নিয়ে পাবনার ঈশ্বরদী সীমানায় প্রবেশ করলেই একটি পক্ষ নৌকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। এতে আহত হচ্ছে বালু ব্যবসায়ী ও বালু পরিবহনকারী শ্রমিকরা। গত এক মাস ধরেই নিয়মিত এসব নিয়ে হামলা, গুলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে নদীটির চরে।আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইসলামপাড়া বালু মহালে হামলা চালিয়ে ২টি টংঘর, একটি পেলুডার ও একটি ডাম্প ট্রাকসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বালু ব্যবসায়ী, পরিবহণকারী শ্রমিক ও নৌকার মাঝিরা জানায়, পদ্মা নদীর লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুরের বালু মহালের ইজারাদার মো. শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে বালু ক্রয় করে পাকশী, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর, তালবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করেন তারা। কিন্তু বালু নিয়ে পদ্মা নদীর ঈশ্বরদীর সাঁড়া সীমানায় আসলেই অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নৌকায় হামলা ও গুলিবর্ষণ করছে। মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করছে হামলাকারীরা।
এখন জীবনের ভয়ে নৌকা নিয়ে যেতেই সাহস পাচ্ছেন না তারা।
পদ্মানদীর লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুরের বালু মহালের ইজারাদার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থ বছরের জন্য নাটোর জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে ৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিশোধ করে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য লীজ গ্রহণ করেন। কিন্তু ভেড়ামারা ফেরিঘাট হয়ে চলাচলকারী বালু বোঝাই নৌকাগুলো ঈশ্বরদীর সাঁড়া ঘাট ও পাকশী হঠাৎপাড়া এলাকায় আসলেই হামলার শিকার হচ্ছে। নৌকার শ্রমিকদের মারধর করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করা হচ্ছেপ্রতিরোধ করতে গেলেই দুষ্কৃতিকারীরা গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
তার বৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনিঈশ্বরদীর ইসলামপাড়া বালুঘাটের ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর চর থেকে দুর্বৃত্তরা উঠে এসে তাদের বালু ব্যবসার টং ঘর, একটি পেলুডা, একটি ডাম্প ট্রাকসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণও করে হামলাকারীরা। পরে টংঘরে থাকা বালু বিক্রয়ের প্রায় দেড় লাখ টাকা নিয়ে গেছে তারা।
নাটোর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোরের বাগাতিপাড়া থানার হিজলী পাবনাপাড়ার মৃত নূর হোসেনের ছেলে মো. শহিদুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স বাংলা ১৪৩২ সালের চৈত্র মাস পর্যন্ত বালু উত্তোলনের সরকারিভাবে ইজারাদারি পেয়েছেন। তিনি ইজারদারীমূল্য বাবদ ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ এক কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ১০ শতাংশ আয়কর বাবদ ৭৬ লাখ ৮০ টাকা অর্থাৎ মোট ৯ কোটি ৬০ হাজার টাকা নির্দিষ্ট সরকারি কোষাগারে জমা দেন। এরপর নাটোর জেলা বালু মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার (রেভিনিউ) মো. তাহমিদুল ইসলাম চলতি বছরের গত ৩ জুন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে পদ্মানদীর লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুরের এক নম্বর খতিয়ানের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর দাগের মোট ৪৫৯ দশমিক ৫০ একর পরিমাণের বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য মোল্লা ট্রেডার্সের মালিক শহিদুল ইসলামকে অনুমতি প্রদান করেছেন।
ঘটনাস্থল থেকে লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরান মাহমুদ তুহিন জানান, প্রয়োজনীয় লোকবল ও যানবাহনের অভাবে খবর পাওয়ার পরও দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
চর দখলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আ স ম আব্দুন নুর। তিনি জানান, পদ্মা নদীর চরের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি পক্ষের মধ্যে লাগাতার গুলিগুলির ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে নদীটির তীরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। এ জন্য পাবনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে নদীতে যৌথ বাহিনী নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।।।

Post a Comment