নিজ-বাবা মায়ের পায়ে থাকা জুতা পরিষ্কার ও উপহার দিয়ে গ্লোবাল ডে অব প্যারেন্টস উদযাপন করল যশোরের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ দিনে প্রতিবারের মতো এবারো ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাদার টিটোস হোম।
রোববার বিকাল থেকে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে মা-বাবার হাত ধরে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরপর মঞ্চে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান সন্তানের মা বাবারা। পরে টিস্যু নিয়ে উপরে উঠে নিজ নিজ বাবা মায়ের জুতা পরিষ্কার করে শিশুরা। শেষে মা-বাবাকে বিশ্ব প্যারেন্টস ডে উপলক্ষে নিজেদের আঁকা বিশেষ শুভেচ্ছা কার্ড উপহার দেসন্তানদের এমন শ্রদ্ধা পেয়ে অভিভাবকরা আবেগাপ্লুত হন। এ সময় অভিভাবকদের পা মোছার পাশাপাশি তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করা, মিথ্যা কথা না বলা ও দুর্নীতি না করার শপথ পড়ান বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
নাহিদা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার বাচ্চাটা নার্সারিতে পড়ে, একটু দুষ্টুমি করলে বকা দেই আমি। আবার একটু পরেই আদর করি। আজ অনুষ্ঠানে আমার সন্তান যখন আমাকে ও তার বাবার জুতা পরিষ্কার করে দিচ্ছিলো; তখনই অঝোরে চোখ বেয়ে জল ঝরতে শুরু করে।
রফিকুল ইসলাস নামে আরেক অভিভাবক বলেন, সন্তানের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাবো, কখনো কল্পনা করিনি। শিশুদের ছোট থেকে যা শেখানো হবে, বড় হয়েও তারা তা অনুসরণ করবে। স্কুলের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
তানিয়া ইসলাম নামে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলে, জীবনে প্রথম বন্ধু মা-বাবা। জীবনের আলো তারা। জীবনের প্রতিটি স্মৃতিতে তাদের ছোঁয়া রয়েছে। মা-বাবার আদর ছাড়া দিনটা শুরু হয় না আমার। তারা আমার প্রথম শিক্ষক। সেই মা বাবার জুতা মুছে পুরস্কার পেয়েছি, খুব ভালো লাগছে।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উৎসব শিরোনামে অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে শুরু হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পর্ব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মা-বাবার প্রতি নৈতিক শিক্ষা দিতে এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়েছে। তবে মানবিকতার জায়গায়, নৈতিকতার জায়গায় অনেক পিছিয়ে। মনুষ্যত্বের জায়গায় দিন দিন আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। এমন ধরণের উদ্যোগ, শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু শিক্ষা পাবে। যা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। মানবিকতার জায়গায়, নৈতিকতায় উন্নতি ঘটবে।
ব্রাদার টিটোস হোমের অধ্যক্ষ আলী আযম টিটোর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন- কেন্দ্রীয় কচিকণ্ঠের আসরের সভাপতি হেমায়েত হোসেন, জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন। আলোচনা শেষে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা মা-বাবাকে নিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে গান, অভিনয় ও কবিতা আবৃত্তি করেন।
বিদ্যালয়টির অধ্যক্ষ আলী আযম টিটো জানান, বিশেষ এ দিনে শ্রদ্ধা পাওয়ার প্রথম দাবিদার বাবা মায়েরা। যদিও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রদর্শনের কোনো বিশেষ দিন প্রয়োজন হয় না। বিশেষ এ দিনে শিশুদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি অটুট ভালোবাসা শ্রদ্ধা এনে দিতেই আমরা ব্যতিক্রমী আয়োজন করি। আমরা প্রতিটি শিশুকে শিখিয়ে থাকি বড় হয়ে ভালো মানুষ হতে হবে এবং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।য়।
Post a Comment