পেটের ব্যথা মানুষের শারীরিক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ, যা অনেককে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। তবে পেটের ব্যথা সবসময় সরল নয়। কখনও এটি শুধুই হজমজনিত সমস্যা বা গ্যাসে আটকে থাকা কারণে হয়, আবার কখনও তা আরও গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়, যেমন অ্যাপেন্ডিসাইটিস, আলসার বা পিত্তথলি পাথর। ব্যথার স্থান, তীব্রতা এবং সাথে উপস্থিত অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমি, ফোলা বা খিঁচুনি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত প্রদান করে। পেটের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি বোঝার মাধ্যমে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কখন ঘরোয়া যত্ন যথেষ্ট এবং কখন ডাক্তার দেখানো জরুরি।পেটের ব্যথা চেনার উপায়: অবস্থান, অনুভূতি ও ট্রিগার অনুযায়ী ১০টি ধরন
১. তীব্র ব্যথা
হঠাৎ করে আসা তীব্র পেটের ব্যথা অনেক সময় তীক্ষ্ণ, খোঁচা দেওয়ার মতো বা প্রচণ্ড মনে হয়। সাধারণত এটি কয়েক ঘণ্টা থেকে দু’দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। খাবারের বিষক্রিয়া, হজমজনিত সমস্যা বা ব্যর্থ খাদ্যের প্রতিক্রিয়া সাধারণ কারণ। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি এবং ভাত, কলা বা টোস্টের মতো হালকা খাবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তবে যদি ব্যথা দ্রুত বেড়ে যায়, অন্যান্য এলাকায় ছড়ায় বা বমি ও জ্বরের সঙ্গে থাকে, তা গুরুতর সমস্যার সংকেত হতে পা২. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে চলা পেটের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বলে ধরা হয়। এটি ধারাবাহিক বা পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সাধারণত এই ধরনের ব্যথা দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, স্টমাক আলসার, ক্রোন রোগ বা এন্ডোমেট্রিওসিসের মতো সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। চাপ ও খারাপ খাদ্যাভ্যাস পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে৩. ক্রমবর্ধমান ব্যথা
সময় সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকা পেটের ব্যথা গুরুতর অবস্থার সংকেত হতে পারে, যেমন গলব্লাডার রোগ, টিউমার, লিভার সমস্যা বা দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত সমস্যা। ওজন কমা, বমি, ক্লান্তি বা পিলকর্ণা (চোখ ও ত্বকে হলুদ ভাব) সঙ্গে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি৪. অন্তরবর্তী ব্যথা
হঠাৎ আসে এবং চলে যায় এমন ব্যথা। এটি প্রায়শই গ্যাস, পিত্তথলি পাথর, কিডনি পাথর বা মাসিকের খিঁচুনি সম্পর্কিত। প্রাকৃতিক উপায় যেমন উষ্ণ পানির ব্যাগ, ক্যামোমাইল চা বা হালকা স্ট্রেচিং সাহায্য করতে পারে৫. পেটের উপরের অংশে ব্যথা
রিবসের নিচের উপরের পেটে ব্যথা অ্যাসিড রিফ্লাক্স, পেপটিক আলসার, প্যানক্রিয়াটাইটিস বা গলব্লাডার সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। সাধারণত জ্বালা বা ফোলাভাব অনুভূত হয়৬. পেটের নিচের অংশে ব্যথা
নাভির নিচে ব্যথা প্রায়শই কোষ্ঠকাঠিন্য, ইউটিআই বা গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার সঙ্গে যুক্ত। হালকা হাঁটা, বেশি পানি পান বা উষ্ণ পানি ব্যাগ ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে আরাম দেয়।
৭. বাম পাশে ব্যথা
বাম পাশে ব্যথা প্রায়শই কোষ্ঠকাঠিন্য, ডাইভার্টিকুলাইটিস বা IBS এর সঙ্গে যুক্ত। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডাইভার্টিকুলাইটিসে খাবারের পরে ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পা৮. ডান পাশে ব্যথা
ডান পাশে পেটের ব্যথা অবস্থান অনুযায়ী ভিন্ন। নিম্ন ডানপাশের তীক্ষ্ণ ব্যথা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সতর্ক সংকেত। উপরের ডানপাশের ব্যথা গলব্লাডার বা লিভার সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
৯. ফোলা ও চাপ অনুভূতি
পেট ফোলা বা ভারী লাগা প্রায়শই গ্যাস, অতিরিক্ত খাওয়া বা ধীর হজমজনিত। হালকা হাঁটা, উষ্ণ পানি পান বা ছোট, ধীর খাবার এড়ানো সাহায্য করতে পারে।
১০. খিঁচুনি ধরনের ব্যথা
পেটের সংকোচনের মতো ব্যথা প্রায়শই ডায়রিয়া, মাসিকের খিঁচুনি বা IBS এর সঙ্গে যুক্ত। পিপারমিন্ট চা, শিথিলকরণ ব্যায়াম বা উষ্ণতা প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে আরাম দেয়।
সব ব্যথাই গুরুতর নয়, তবে দীর্ঘস্থায়ী বা বাড়তে থাকা ব্যথা উপেক্ষা করলে সঠিক নির্ণয় ও চিকিৎসা বিলম্বিত হতে পারে। পেটের ব্যথার অবস্থান, ধরন ও পুনরাবৃত্তি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সংকেত বোঝা
Post a Comment