কোলেস্টেরল নিঃশব্দে শরীরে জমতে থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো উপসর্গই বোঝা যায় না। তবে আশার খবর হলো, কোলেস্টেরল কমাতে সবসময় ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু ছোট ও নিয়মিত পরিবর্তন আনলেই বড় পার্থক্য তৈরি করা সম্ভব। গবেষণাভিত্তিক এমন বেশ কিছু কার্যকর উপায় জানিয়েছেন পারিবারিক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডা. ম্যাডিসন ব্রাউন, যার অভিজ্ঞতা দুই দশকেরও বেশি।
খাদ্যতালিকায় বাড়ান দ্রবণীয় আঁশ
ওটস, মসুর ডাল, চিয়া বীজ ও তিসি বীজে প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ রয়েছে। এই আঁশ হজমতন্ত্রে কোলেস্টেরলের সঙ্গে মিশে একে শরীর থেকে বর্জ্য আকারে বের করে দেয়। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিনে মাত্র ৫ থেকে ১০ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ গ্রহণ করলে এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল প্রায় ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
আঁশ অন্ত্রে জেলির মতো আস্তরণ তৈরি করে, যা কোলেস্টেরলকে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। সকালের নাস্তায় ওটমিল খাওয়া বা স্মুদিতে এক চামচ তিসি বীজ যোগ করা এ প্রক্রিয়া শুরু করার সহজ উপায়।
প্লেট ভরান উদ্ভিজ্জ খাবারে
ফল, শাকসবজি, বাদাম ও বীজ শুধু পুষ্টি নয়, প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ যৌগও দেয়, যেগুলো কোলেস্টেরল শোষণ ঠেকায়। ন্যাশনাল কোলেস্টেরল এডুকেশন প্রোগ্রাম জানায়, দিনে প্রায় ২ গ্রাম উদ্ভিজ্জ স্টেরল গ্রহণ করলে এলডিএল কোলেস্টেরল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এগুলো শরীরকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও দেয়, যা ধমনিকে সুরক্ষা দেয় এবং আঁশের মাধ্যমে কোলেস্টেরল ঝরতে সাহায্য করে।
ট্রান্স ফ্যাট বাদ দিয়ে নিন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা ফাস্ট ফুড ও কিছু মার্জারিনে থাকা ট্রান্স ফ্যাট ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন পরামর্শ দেয় এগুলো বাদ দিয়ে জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো, আখরোট ও স্যামন বা সার্ডিনের মতো তেলযুক্ত মাছ খেতে। এসব খাবারে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়, ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় এবং সামান্য হলেও এইচডিএল বাড়ায়। স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকা ভালো ও খারাপ কোলেস্টেরলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে, ধমনিকে রাখে পরিষ্কার এবং হৃদপিণ্ডকে রাখে সুস্থ।
নিয়মিত হাঁটুন, সক্রিয় থাকুন
কোলেস্টেরল কমাতে কঠিন ব্যায়ামের দরকার নেই। বিশেষজ্ঞরা জানান, সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটলেই এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়। শারীরিক কার্যকলাপ রক্ত থেকে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল সরিয়ে যকৃতে নিয়ে যায়, যেখানে তা ভেঙে বেরিয়ে যায়।
চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কমান
অতিরিক্ত চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তাদের দৈনিক ক্যালরির ২৫ শতাংশের বেশি যোগ করা চিনির মাধ্যমে গ্রহণ করে, তাদের হৃদ্যন্ত্র-সংক্রান্ত মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সফট ড্রিংক, মিষ্টি, সাদা পাউরুটি ও পেস্ট্রি কমিয়ে আনলে ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ মানে রাতারাতি জীবনধারার আমূল পরিবর্তন নয়। বরং এটি ধাপে ধাপে নেওয়া টেকসই ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের ফল, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে রক্ষা করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, সক্রিয় জীবনধারা আর নিয়মিত সতর্কতা আপনার হৃদপিণ্ডকে রাখতে পারে আরও শক্তিশালী ও সুস্থ।
Post a Comment