হঠাৎ করেই কি পা ফুলে যায়, কখন ডাক্তার দেখাতে হবে

 অনেকেরই দেখা যায় প্রায় সময় পায়ের পাতার অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। শুরুতে এটি হয়তো ছোট থাকায় অসুবিধা মনে না হলেও, কখনো কখনো এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে দাঁড়ানো বা বসার কারণে, গরম আবহাওয়া, বেশি লবণযুক্ত খাবার খাওয়া বা গর্ভাবস্থা এসব সাধারণ কারণেও পায়ে ফোলা দেখা দিতে পারে। কিন্তু মাঝে মাঝে হার্ট, কিডনি, লিভার বা রক্তনালিতে সমস্যা থাকলেও ফোলা পায়ের প্রভাব দেখা যায়। মেডিকেল নিউজ টুডের প্রতিবেদনে পায়ের ফোলাভাবের কারণ, লক্ষণ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে চিকিৎসক আলোচনা করেছেন। 


১. এডিমা


এডিমা হলো শরীরের টিস্যুগুলিতে অতিরিক্ত পানি জমে ফোলাভাব দেখা যাওয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত নাম। সাধারণত এটি পা, টাখনা ও পায়ের পাতায় দেখা যায়, তবে মুখ বা হাতে ও হতে পারে।


লক্ষণ:


ফোলা অংশে চামড়া উজ্জ্বল ও টানটান দেখা যায়

চেপে রাখলে চিহ্ন থেকে যায়

অস্বস্তি বা চলাফেরায় অসুবিধা

ফুসফুসে প্রভাব থাকলে কাশি বা শ্বাসকষ্ট

২. পা বা টাখনার আঘাত


পায়ে বা টাখনায় আঘাত যেমন, ফোলা, কাটা বা স্প্রেইনের কারণে ফোলা দেখা দিতে পারে।


প্রতিকার:


পা ওপরে তুলে রাখা

আঘাতপ্রাপ্ত পায়ে বেশি ওজন না দেওয়া

আইস প্যাক বা কম্প্রেশন ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা

প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ নেয়া

যদি ফোলা ও ব্যথা চলে না যায়, ৩. গর্ভাবস্থা


গর্ভাবস্থার শেষ দিকে পায়ের ফোলা খুবই সাধারণ। এটি শরীরে পানি জমা ও রক্তনালিতে চাপ বৃদ্ধি থেকে হয়।


প্রতিকার:


পা ওপরে তুলে রাখা

আরামদায়ক ও সমর্থনযুক্ত জুতো পরা

দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো বা বসা এড়ানো

ঠাণ্ডা থাকা, লবণ কম খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি নেওয়া

কমপ্রেশন স্টকিং বা সমর্থনযুক্ত পোশাক ব্যবহার করা

৪. প্রিক্ল্যাম্পসিয়া


গর্ভাবস্থায় হঠাৎ এবং অত্যধিক ফোলা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এটি উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্রাবে প্রোটিন, মাথা ঘোরা, বমি, চোখে সমস্যা ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে। এটি জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।


৫. জীবনধারার প্রভাব


দীর্ঘক্ষণ বসা বা দাঁড়ানো, ওজন বেশি থাকা, লবণসমৃদ্ধ খাবার এসবও পায়ের ফোলার কারণ হতে পারে।


প্রতিকার:


নিয়মিত হালকা ব্যায়াম

মধ্যম ওজন বজায় রাখা

লবণ খাওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রভাব


কিছু ওষুধ, যেমন হরমোন, কনট্রাসেপ্টিভ পিল, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, রক্তচাপের ওষুধ ও স্টেরয়েড, পানি জমিয়ে পায়ে ফোলা সৃষ্টি করতে পারে।


প্রতিকার:


ডাক্তার সঙ্গে পরামর্শ করে ডো৭. অ্যালকোহল এবং লিভার রোগ


অ্যালকোহল অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। লিভার সমস্যার কারণে ফোলা দেখা দিতে পারে।


প্রতিকার:


অ্যালকোহল পরিহার

ডাক্তার নির্দেশিত ওষুধ বা প্রয়োজনে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট

৮. গরম আবহাওয়া


উচ্চ তাপমাত্রায় পায়ের ফোলা সাধারণ। রক্তনালী প্রসারিত হয়ে পানি চারপাশে ছড়িয়ে দেয়।


প্রতিকার:


পর্যাপ্ত পানি পান

আরামদায়ক জুতো পরা

কমপ্রেশন স্টকিং ব্যবহার করা

৯. সংক্রমণ


ডায়াবেটিসসহ কিছু রোগীর পায়ের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি।


প্রতিকার:


ডাক্তার প্রদত্ত অ্যান্টিবায়োটিক১০. ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি


রক্ত হৃদয়ে ফিরে না এসে পায়ে জমা হলে ফোলা হয়।


প্রতিকার:


ব্যায়াম, কমপ্রেশন স্টকিং, ওষুধ

গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি

১১. রক্ত জমাট 


পায়ের রক্তনালীতে ব্লক বা ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস হলে পায়ে ফোলা, ব্যথা ও রং পরিবর্তন দেখা দেয়।


প্রতিকার:


জরুরি চিকিৎসা

রক্ত পাতলা করার ওষুধ

কমপ্রেশন স্টকিং পরা

১২. লিম্ফেডিমা 


লিম্ফ সিস্টেমের সমস্যা থাকলে লিম্ফ তরল জমে পা ফোলা হয়।


প্রতিকার:


টার্গেটেড মাসাজ

ব্যায়াম

ব্যান্ডেজ বা কমপ্রেশন গার্মেন্ট

১৩. হার্টের সমস্যা


হার্ট দুর্বল হলে বা হার্ট ফেইলিউর হলে শরীরে লবণ ও পানি জমে পায়ের ফোলা হয়।


লক্ষণ:


শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হার্টবিট

ক্লান্তি, বমি, ওজন বৃদ্ধি

পেটে ফোলা

১৪. কিডনি সমস্যা


কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে পানি জমে ফোলা দেখা যায়।


প্রতিকার:


ওষুধ, ডায়ালিসিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট


১৫. লিভার সমস্যা


অ্যালবুমিন প্রোটিনের অভাবে রক্তনালী থেকে পানি বের হয়ে পায়ে জমে।


লক্ষণ:


যকৃতের জন্ডিস, প্রস্রাবে সমস্যা, দুর্বলতা

পেটে ফোলা, বমি, ত্বকে চুলকানি

 পা ফুলে গেলে কখন ডাক্তারকে দেখানো উচিত


ফোলা বারবার বা দীর্ঘস্থায়ী হলে

ফোলার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা বা চাপ দেখা দিলে

একপাশের পায়ে হঠাৎ ফোলা, লাল ভাব বা তাপ অনুভূত হলে

পায়ের ফোলা শুধু অস্বস্তিকর নয়, কখনো কখনো এটি গুরুতর রোগের ইঙ্গিতও দিতে পারে। সাধারণ কারণ যেমন গরম আবহাওয়া বা গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি বা লিভারের সমস্যা, রক্তজমাট বা লিম্ফেডিমা সবকিছু ফোলার কারণ হতে পারে। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি যেমন পা উঁচু করা, হালকা ব্যায়াম, কমপ্রেশন স্টকিং বা লবণ কম খাওয়া উপকারী। তবে ফোলা দীর্ঘস্থায়ী বা অন্য গুরুতর লক্ষণের সঙ্গে থাকলে ডাক্তার দেখানো অত্যন্ত জরুরি।

প্রয়োজনে জরুরি চিকিৎসাজ পরিবর্তন বা অন্য ওষুধ নেয়াডাক্তার দেখানো জরুরি।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post