সকালে ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও উপকারিতা

 আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এই খাদ্য শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে ফল খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য আশ্চর্যজনক উপকার করে। অনেকে ভাবেন সকালে চা বা ভারী নাশতা খাওয়াই ভালো, কিন্তু দিনের শুরুটা যদি এক বা একাধিক মৌসুমি ফলে হয় তবে শরীর যেমন হালকা থাকে, তেমনি প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে সহজে শোষিত হয়। ফলে দিনভর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়।সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর সারারাত উপবাসে থাকে। এই সময়ে পাকস্থলী খালি থাকে এবং পরিপাকতন্ত্র নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুত হয়। খালি পেটে ফল খেলে এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা খুব সহজেই শরীরে মিশে যায়। চিনি জাতীয় প্রক্রিয়াজাত খাবারের তুলনায় ফলের প্রাকৃতিক গ্লুকোজ শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয় কিন্তু কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। তাই সকালে খালি পেটে এক বা দুই ধরনের ফল খাওয়া দিনের শুরুতে শরীরকে চাঙা করে তোলে।এছাড়া ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। সকালে শরীর স্বাভাবিকভাবে ডিহাইড্রেশনের দিকে চলে যায়। ঘুমের সময়ে আমরা পানি পান করি না, ফলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সকালে ফল খেলে সেই ঘাটতি সহজেই পূরণ হয়। বিশেষ করে তরমুজ, কমলা, আঙুর, আপেল বা পেঁপে খেলে শরীর পর্যাপ্ত পানি পায় এবং কোষগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।


ফল শরীরকে শুধু শক্তি জোগায় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। সকালে খাওয়ার ফলে এতে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদান শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। এর ফলে সর্দি-কাশি, সংক্রমণ বা ক্লান্তি কম হয়। যারা নিয়মিত সকালে ফল খেয়ে থাকেন তাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল থাকে এবং বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না।


সকালে ফল খাওয়ার আরেকটি বড় উপকারিতা হলো হজমের সুবিধা। ভারী নাশতা খাওয়ার আগে যদি ফল খাওয়া হয়, তবে এতে থাকা আঁশ বা ফাইবার অন্ত্রের কার্যক্রমকে সক্রিয় করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, পেট পরিষ্কার থাকে এবং সারাদিন হালকা অনুভূত হয়। ফাইবার রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাডায়াবেটিসের রোগীরাও সকালে পরিমিত পরিমাণে ফল খেলে উপকৃত হতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে মিষ্টি জাতীয় ফলের পরিবর্তে কম মিষ্টি ফল যেমন পেয়ারা, আপেল বা পেঁপে বেছে নেওয়া উত্তম। ফলে থাকা প্রাকৃতিক চিনি রক্তে দ্রুত জমা হয় না, বরং ধীরে ধীরে শোষিত হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


এছাড়া সকালে ফল খেলে মানসিক সতেজতা আসে। ফলে থাকা ভিটামিন বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা সকালে ফল খেয়ে কাজ শুরু করেন তারা সারাদিন মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন এবং মানসিক চাপ কম অনুভব করেন।


তবে ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম মেনে চলাও জরুরি। অনেক সময় আমরা সকালের নাশতার পর বা ভারী খাবারের পর ফল খেয়ে থাকি। এতে হজমে সমস্যা হয় এবং পেটে অস্বস্তি তৈরি হয়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর ফল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এরপর অন্তত আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে নাশতা করা উচিত। এতে শরীর ফলের গুণাগুণ পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে।


সকালে খালি পেটে টকজাতীয় ফল যেমন লেবু বা কমলার রস অতিরিক্ত খাওয়াও ঠিক নয়, কারণ এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। তাই এসব ফলের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে বা হালকা কিছু খাওয়ার পর খাওয়া ভালো। আবার কলা খাওয়ার সময়ও সতর্ক থাকা দরকার। খালি পেটে কলা খেলে কারও কারও হজমে অসুবিধা হতে পারে। তাই কলা নাশতার সঙ্গে বা হালকা কিছু খাওয়ার পর খাওয়াসবচেয়ে ভালো হয় মৌসুমি ফল খেলে। মৌসুমি ফলে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান মজুত থাকে। গ্রীষ্মকালে যেমন তরমুজ বা বাঙ্গি শরীরকে শীতল রাখে, বর্ষায় আম বা লিচু শক্তি জোগায়, আবার শীতকালে কমলা বা মাল্টা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।


সকালে ফল খাওয়ার সঠিক সময় হলো খালি পেটে ঘুম থেকে ওঠার কিছুক্ষণ পর, নাশতার আগে। নিয়মিত এ অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরের শক্তি বাড়বে, হজমশক্তি ভালো হবে, ত্বক উজ্জ্বল থাকবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানসিক সতেজতাও বজায় থাকবে। প্রতিদিনের জীবনে ছোট একটি পরিবর্তন— সকালে ফল খাওয়ার অভ্যাস আমাদের সার্বিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর জন্য বড় অবদান রাখতে পারে। 

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post