ঘাম ও ঘামাচি প্রতিরোধ এবং এ থেকে মুক্তির উপায়

 

গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ ঘাম ও ঘামাচির সমস্যায় ভুগে থাকেন। ঘাম হওয়া একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তবু অতিরিক্ত ঘাম ও ঘামাচি শারীরিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


ঘাম কী : ঘাম হলো শরীরের ঘর্মগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি পানির মতো তরল পদার্থ। মানবদেহে প্রধানত দুধরনের ঘর্মগ্রন্থি রয়েছে- ইক্রিন (Eccrine) ও অ্যাপোক্রিন (Apocrine)। ইক্রিন ঘর্মগ্রন্থি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আর অ্যাপোক্রিন ঘর্মগ্রন্থি সাধারণত নির্দিষ্ট অংশে (যেমন- বগল, লিঙ্গ) থাকে ও বিশেষ ধরনের ঘাম তৈরি করে, যা শরীরের গন্ধ সৃষ্টি করে।


ঘামের কাজ : শরীরের অতিরিক্ত তাপ দূরীকরণ করে শরীর ঠান্ডা রাখে। শরীর থেকে পানি ও লবণ বের করে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে। শরীর থেকে কিছু অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করে।


অতিরিক্ত ঘামের কারণ : ঘাম হওয়া স্বাভাবিক হলেও অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা হাইপারহাইড্রোসিসের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক বা বংশগত কারণে কিছু মানুষের ঘর্মগ্রন্থি অন্যদের তুলনায় বেশি সক্রিয় থাকে, যা বংশগত হতে পারে। পরিবেশগত কারণে গরম ও আর্দ্রতা বাড়ায় শরীর অতিরিক্ত ঘাম উৎপাদন করে। শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করায় শারীরিক কর্ম বা ব্যায়াম করলে শরীর থেকে তাপ বের করতে ঘাম হয়। খাদ্যাভাস, যেমন- গরম, ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার খেলে, বেশি চা-কফি ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলে ঘাম হতে পারে। অনেক সময় টেনশন, উদ্বেগ বা ভয়ে স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হয়ে অতিরিক্ত ঘাম শরীর থেকে বেড়িয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েডের অতিরিক্ত কার্যক্ষমতা), হার্টের সমস্যা বা রক্তচাপের সমস্যা, সংক্রমণ ও জ্বর, কিছু ক্যানসার ও নিউরোলজিক্যাল রোগ, গর্ভাবস্থা, রক্তস্বল্পতা বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পর, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় (যেমন- ব্যথানাশক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট) ঘাম ঝরতে পারে।


ঘামাচি কী : ঘামাচি ত্বকের রোগ। ঘর্মগ্রন্থির মুখ আটকে থাকলে বা বন্ধ হয়ে গেলে এটি হয়। এতে ঘাম ত্বকের ওপর নির্গত হতে না পেরে ঘর্মগ্রন্থির চারপাশে প্রদাহ ও ফুসকুড়ি সৃষ্টি হয়। এর প্রধান কারণ- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এবং ঘামের অতিরিক্ত জমা। ঘর্মগ্রন্থির মুখে ময়লা, ধুলো ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ; গরম, আর্দ্র আবহাওয়া এবং অপর্যাপ্ত বাতাস চলাচল; ঘন কাপড় পরিধান বা ঘামের জমাট বাধা। ঘামাচির উপসর্গ হলো-ত্বকে লালচে দাগ ও ছোট ফুসকুড়ি। ত্বকের চুলকানি ও জ্বালা। কখনও পোড়ার অনুভূতি হয়।


প্রতিরোধের উপায় : খোলা ও ফাঁকা জায়গায় থাকুন। ঘরে ভেন্টিলেশন বজায় রাখুন। এসি বা ফ্যান ব্যবহার করুন। ঢিলা ও হালকা সুতির পোশাক পরিধান করুন। রোদ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন। মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।


চিকিৎসা : ঘামাচির চিকিৎসা হলো- Calamine Lotion বা Prickly Heat Powder ব্যবহার করা। এতে ত্বক শীতল থাকে। ডাক্তারের পরামর্শে ত্বকে হালকা স্টেরয়েড ক্রিম প্রয়োগে প্রদাহ কমতে পারে। চুলকানির জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। সংক্রমণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঘামের জন্য অ্যান্টিপার্সপিরেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা থেরাপি গ্রহণ করা যেতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে ঘর্মগ্রন্থি অপসারণ বা নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন।


সতর্কতা : ঘামের সঙ্গে যদি গরম লাগে, মাথা ঘোরে, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটা গরমে শক বা হিট স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে, যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।


লেখক : চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র কনসালট্যান্ট, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২, ০৯৬৭৮৮২২৮২২

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post