মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। প্রতিদিন এই দুটি ছোট অঙ্গ শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি, লবণ এবং বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে দেয়। পাশাপাশি শরীরের তরল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিডনি সুস্থ না থাকলে উচ্চ রক্তচাপ, শরীরে ফোলা, দুর্বলতা, প্রস্রাবের সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগ দেখা দেয়। তাই কিডনিকে সুস্থ রাখতে জীবনযাপনে কিছু সচেতনতা জরুরি। আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের মধ্যে চা এবং কফি অন্যতম। কিন্তু প্রশ্ন হলো—চা-কফি কমানো কি কিডনি রক্ষার জন্য জরুরি?চা ও কফি অনেকের প্রিয় পানীয়। দিনের শুরুতে এক কাপ গরম চা কিংবা কফি যেন এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতে ক্যাফেইন নামক উপাদান থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং সাময়িকভাবে শরীরকে চনমনে করে তোলে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে নানা প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে কিডনির ওপর এর প্রভাব নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলছে। পরিমিত চা বা কফি শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে উপকারীও বটে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দিনে তিন-চার কাপের বেশি চা-কফি খাওয়া হয়।ক্যাফেইন শরীরে মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়, একে ডাইইউরেটিক প্রভাব বলে। এর মানে হলো শরীর থেকে দ্রুত পানি বেরিয়ে যায়। যদি পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ না করা হয়, তবে শরীর ডিহাইড্রেশনে ভুগতে পারে। ডিহাইড্রেশন কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকর, কারণ পানি কমে গেলে কিডনি বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করতে সমস্যায় পড়ে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি হয়। এছাড়া অতিরিক্ত ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়াতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ আবার কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকির কারণ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি। কফি ও চায়ে থাকা কিছু উপাদান প্রস্রাবের সঙ্গে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ বাড়াতে পারে। শরীরে যদি পর্যাপ্ত তরল না থাকে, তবে এই ক্যালসিয়াম জমে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। তবে সব গবেষণাই যে কফি বা চা সরাসরি কিডনিতে পাথর তৈরি করে, তা নয়। বরং অনেকে মনে করেন পরিমিত চা বা কফি পাথর প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি প্রস্রাবের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এর শর্ত হলো—পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন নেওয়া যাবে নাঅন্যদিকে, কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে কফি খাওয়া শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয়। একইভাবে চায়ে থাকা পলিফেনল নামক উপাদানও স্বাস্থ্যকর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে পুরোপুরি চা-কফি বাদ দেওয়া জরুরি নয়। আসল ব্যাপার হলো ভারসাম্য বজায় রাখা।
তাহলে কতটুকু নিরাপদ? সাধারণভাবে বলা হয় দিনে এক থেকে দুই কাপ চা বা কফি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে এর বেশি হলে কিডনির পাশাপাশি ঘুমের সমস্যা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অস্থিরতা ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে। যারা ইতিমধ্যে কিডনি রোগে ভুগছেন বা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের রোগী, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত করতে হবে।
এছাড়াও একটি বড় অভ্যাস হলো চা বা কফি খাওয়ার সময় পানি কম খাওয়া। অনেকে সারাদিনে কয়েক কাপ চা-কফি খেলেও পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। এতে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয় এবং কিডনি আক্রান্ত হয়। তাই যতবার চা বা কফি খাবেন, তার পাশাপাশি যথেষ্ট পানি খাওয়াও জরুরি।
কিডনি রক্ষার জন্য চা-কফি পুরোপুরি বাদ দেওয়া জরুরি নয়, তবে এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। যারা সুস্থ, তারা দিনে এক-দুই কাপ খেতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত সেবন কিডনিকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই সচেতনভাবে পরিমিত চা-কফি পান, পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ এবং সুষম জীবনযাপনই কিডনি সুস্থ রাখার মূলঅনেক সময় ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা যাদের আছে, তাদের জন্য চা-কফি অতিরিক্ত ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এই অবস্থায় কিডনি ইতিমধ্যে দুর্বল থাকে। ক্যাফেইন সেই দুর্বল কিডনিকে আরও চাপে ফেলে। তাছাড়া অনেকেই চা বা কফির সঙ্গে বেশি চিনি ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত চিনি আবার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়, যা কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উপায়।
Post a Comment