মানব শরীরে শক্তির মূল উৎস হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। অনেকেই অল্প সময়ের মধ্যে ওজন কমানোর জন্য কার্বোহাইড্রেটকে খাদ্যতালিকা থেকে একদমই বাদ দিয়ে দেন। অথচ, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট থাকা জরুরি। এ অবস্থায় যদি খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেয়া হয়, তাহলে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।ওজন কমানোর জন্য খাদ্যতালিকা থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দেয়ার পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা যুক্তি ও বিতর্ক রয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ নমিতা সতীশ। এবার তাহলে তার ভাষ্য অনুযায়ী এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মটরশুঁটি, ফল, সবজি এবং চিনি। এর মধ্যে চিনি, মধু, মিষ্টি ফল এবং সাদা রুটি হচ্ছে সরল কার্বোহাইড্রেট। আর শস্যদানা, আলু, ফল, সবজি, শিম ও মটরশুঁটি এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য হচ্ছে জটিল কার্বোহাইড্রেট।কার্বোহাইড্রেট কাজ করে কীভাবে:
কার্বোইাইড্রেট শরীরে গ্লুকোজে রুপান্তরিত হয়। যা কোষের শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াকে এটিপি (ATP) উৎপাদন বলা হয়। যদিও ফ্যাট থেকে শরীর এটিপি তৈরি করতে পারে, কিন্তু মস্তিষ্ক সবসময় গ্লুকোজকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে শরীরে কী ঘটে:
পেশী ক্ষয়: কার্বোহাইড্রেট না থাকায় শরীর এটিপি উৎপাদনের জন্য প্রোটিনকে ব্যবহার করা শুরু করে। ফলে ক্ষয় হতে থাকে পেশী।
কেটোসিস শুরু হয়: শরীর ফ্যাট পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় কেটোসিস। এ অবস্থায় শরীরে দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস বা ক্লান্তি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস: গ্লুকোজে চলে মস্তিষ্ক। কার্ব যদি একদমই খাওয়া না হয়, তাহলে মস্তিষ্ক গ্লুকোজ পাবে না। এতে ফোকাস একদমই কমে যেতে পারে। ফলে মুড সুইং হতে পারে।
হজমে সমস্যা: খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিলে স্বাভাবিক ফাইবারও কমে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
হৃদরোগের সমস্যা: ফাইবার কম খাওয়া হলে কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
কার্বোহাইড্রেট ভালো কেন:
এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ নমিতা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াজাত কার্ব কমিয়ে দিতে হবে। বরং ওটস, বাদাম, ডাল, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি থেকে জটিল কার্ব গ্রহণ করতে হবে। এসব খাবারে ফাইবার ও মিনারেলস উপাদান রয়েছে।
কম কার্ব ডায়েট কাদের জন্য:
ডায়াবেটিস রোগী, যাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়।
খিঁচুনিতে আক্রান্ত রোগীরা: খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কম কার্ব ডাওজন কমাতে চাইলে: স্বাস্থ্য যদি বেশি মনে হয় তাহলে কম কার্ব ডায়েট করতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কার্বোহাইড্রেট ছাড়া থাকা যাবে না।
পরামর্শ: একদমই কার্ব না খেয়ে ওজন কমানো কখনো সমাধান নয়। বরং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমন সব খাদ্য খেতে হবে, যাতে জটিল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইবার থাকবে। তবেই শরীর ও মস্তিষ্ক ভালো থাকবে।য়েট মেনে চলতে পারেন
Post a Comment