ক্যান্সার হওয়ার ১ বছর আগে যেসব পূর্ব লক্ষণ দেখা দেয়

 অনেকে মনে করেন বুক জ্বালা বা হেয়ার্টবার্ন হলো সাধারণ হজমের সমস্যা। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—এই উপসর্গকে অবহেলা করা হতে পারে মারাত্মক ভুল। কারণ, দীর্ঘস্থায়ী বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে এক ধরনের ভয়াবহ ও বিরল ক্যানসারের আগাম সংকেত, যার নাম ইসোফ্যাজিয়াল ক্যানসার।


ক্যান্সার হওয়ার এক বছর আগে থেকেই কিছু পূর্ব লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যা শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শরীরের যেকোনো অংশে চাকা বা দলা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা, ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ক্লান্তি, ত্বকের পরিবর্তন, এবং হজমে সমস্যা। যদি এই লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


ইসোফ্যাজিয়াল ক্যানসার খাদ্যনালীর দেয়ালে থাকা কোষে গঠিত হয়। বিশ্বজুড়ে এটি ১০তম সর্বাধিক পরিচিত ক্যানসার, তবে এর লক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট হয় না। ফলে দেরিতে শনাক্ত হয় এবং তখন চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে।


এই ক্যানসারের প্রধান দুটি ধরন:


* স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা: খাদ্যনালীর সমতল কোষে গঠিত হয়


* অ্যাডেনোকার্সিনোমা: তরল নিঃসরণকারী কোষে (মিউকাস) তৈরি হয়


যেকোনো একজন ব্যক্তির মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:


* বুকের মাঝখানে বা পিঠে ব্যথা


* গলা ব্যথা বা গিলতে কষ্ট হওয়া


* ওজন হঠাৎ করে কমে যাওয়া (অনিচ্ছাকৃতভাবে)


* রক্ত বমি অথবা কাশির সঙ্গে রক্ত আসা


* নিয়মিত বা দীর্ঘদিন ধরে হেয়ার্টবার্ন


* কণ্ঠস্বর ভারী বা ভেঙে যাওয়া


পাকস্থলীর অ্যাসিড যদি বারবার উল্টোভাবে খাদ্যনালীতে উঠে আসে, তখন তাকে বলা হয় জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ। দীর্ঘমেয়াদি জিইআরডি আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যারেটের ইসোফ্যাগাস নামক একটি অবস্থা তৈরি হতে পারে, যেখানে খাদ্যনালীর কোষের গঠন পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তা ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।


নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক উপসর্গ থাকলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:


* সপ্তাহে একাধিকবার হেয়ার্টবার্ন হওয়া


* গিলতে কষ্ট হওয়া বা খাবার আটকে যাওয়ার অনুভূতি


* হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া


* রক্ত বমি বা রক্তসহ কাশি হওয়া


বিশেষত ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে পুরুষ, ধূমপায়ী, স্থূলতা আক্রান্ত এবং যাদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে—তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত।


### ইসোফ্যাজিয়াল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব কারণ


* ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন


* অতিরিক্ত শরীরের ওজন


* দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা ব্যারেটের ইসোফ্যাগাস


* কিছু বিরল রোগ যেমন আকালেশিয়া, টাইলোসিস


* HPV ভাইরাস সংক্রমণ


* ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস


* কিছু শিল্প রাসায়নিকের দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ


পেটের জ্বালা বা হেয়ার্টবার্নকে অবহেলা না করে নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। সময়মতো রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসাই পারে জীবন বাঁচাতে। সুতরাং শরীরের বার্তা বুঝুন, অবহেলা নয়—সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post