চোখ শুধু দৃষ্টিশক্তির অঙ্গ নয়, বরং এটি শরীরের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আগাম সংকেত জানানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলজনিত জটিলতা এমনকি কিছু ধরনের ক্যান্সারেরও প্রাথমিক লক্ষণ চোখের ভেতর ধরা পড়ে। নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা এসব রোগের প্রাথমিক স্তরেই শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা অনেক সময় জীবন রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে।চোখে ধরা পড়ে শরীরের লুকানো রোগ
২০২৪ সালে ফ্রন্টিয়ার্স ইন মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সমস্যা, অটোইমিউন রোগ এবং ক্যান্সার-এসব গুরুতর অসুখের সূক্ষ্ম লক্ষণ প্রথমে চোখেই প্রকাশ পায়। রেটিনার রক্তনালী সরাসরি দৃশ্যমান হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এর সংকীর্ণতা, অস্বাভাবিক রঙ বা জমাট বাঁধা পদার্থ দেখে আগাম সতর্ক হতে পারেন। এ কারণে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা রোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস: উপসর্গের আগে শনাক্তকরণ
ডায়াবেটিসকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউট জানায়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হলো এই রোগের সবচেয়ে প্রাথমিক জটিলতা, যা চোখের ভেতর ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোতে ক্ষতি করে। এতে ফোলা, রক্তক্ষরণ বা অস্বাভাবিক রক্তনালী গঠিত হয়। ২০২৫ সালের মেডস্কেপ-এর একটি পর্যালোচনা বলছে, এসব পরিবর্তন অনেক সময় রক্ত পরীক্ষায় ডায়াবেটিস শনাক্ত হওয়ার আগেই চোখে ধরা পড়ে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা অত্যন্ত জরুউচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের লক্ষণ
উচ্চ রক্তচাপের কারণে ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি’ দেখা দেয়, যেখানে চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালী সংকুচিত বা মোটা হয়ে যায় এবং কখনও কখনও রক্তক্ষরণ ঘটে। অন্যদিকে, কোলেস্টেরল জমা হলে চোখের পাতায় হলদে দাগ (জ্যানথেলাজমা) কিংবা রেটিনার ভেতর জমাট বাঁধা প্লাক ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো সময়মতো শনাক্ত হলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়ক্যান্সার ও স্নায়ুরোগ
চোখে অস্বাভাবিক দাগ বা রঙের পরিবর্তন ক্যান্সারের সংকেতও হতে পারে। রেটিনোব্লাস্টোমা বা অকুলার মেলানোমার মতো চক্ষু ক্যানসার ছাড়াও অনেক সময় শরীরের অন্য ক্যান্সার চোখে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণা বলছে, এমনকি কোলন ক্যান্সারের কিছু বিশেষ রেটিনাল প্যাটার্নও চোখে ধরা সম্ভব। পাশাপাশি, একাধিক স্নায়ুরোগ যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মস্তিষ্কের টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণও চোখে প্রকাশ পায়-যেমন হঠাৎ দ্বিগুণ দেখা, চোখের মণির অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বা পড়তে সমস্যাগ্লকোমা: নীরব দৃষ্টিহন্তা
গ্লকোমাকে বলা হয় ‘নীরব চোর’, কারণ রোগটি ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেয়, অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে এর কোনো লক্ষণ থাকে না। চোখের ভেতরের চাপ বেড়ে অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ রোগ দেখা দেয়। এমনকি যাদের চোখের চাপ স্বাভাবিক, তাদেরও বয়স, উচ্চ রক্তচাপ বা ঘুমের সমস্যার কারণে নরমোটেনসিভ গ্লকোমা হতে পারে। নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা এবং চক্ষু চাপ পরিমাপ গ্লকোমার আগাম শনাক্তকরণে অত্যন্ত কার্যকরকেন জরুরি নিয়মিত চোখ পরীক্ষা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোখ শুধু দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে না, বরং পুরো শরীরের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কেও প্রাথমিক তথ্য দেয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ক্যান্সার কিংবা স্নায়ুরোগ-এসবের প্রাথমিক সংকেত চোখে ধরা পড়ে। তাই নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা মানেই অদৃশ্য ঝুঁকি থেকে অগ্রিম সুরক্ষা। চোখ আসলেই শরীরের লুকানো স্বাস্থ্যকাহিনির এক অনন্য জানালা।
Post a Comment