আজকের প্রজন্মের সামনে সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটগুলোর একটি হল পর্নোগ্রাফি এবং হস্তমৈথুনে আসক্তি। শত শত তরুণ এই ধ্বংসাত্মক নেশায় জড়িয়ে পড়ছে প্রতিদিন। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার ফলে তারা তলিয়ে যাচ্ছে এক অন্ধকার অতলে, যেখানে প্রবেশ সহজ, কিন্তু বের হওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর।এই আসক্তি শুধু তাদের বর্তমানকেই গিলে খাচ্ছে না, বরং বিবাহ পরবর্তী জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক ও ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর ফেলছে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব। সামান্য সময়ের আনন্দের জন্য তারা বিসর্জন দিচ্ছে জীবনের দীর্ঘমেয়াদী প্রশান্তি ও স্থায়ী সুখ।এমন ভয়ংকর অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। নিচে তুলে ধরা হলো এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ,
১. জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
যারা জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে না, তারাই সাধারণত অপচয় ও অপকর্মের দিকে ধাবিত হয়। লক্ষ্য-নির্ভর জীবন পরিচালনা করলে আত্মনিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং সময় নষ্ট হয় না নিরর্থক কিংবা ক্ষতিকর কাজে। আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তিই হবে এই আসক্তির বিরুদ্ধে আপনার প্রথম প্রতি২. নিজেকে একাকিত্বে রাখবেন না
পাপ ও অশ্লীলতার বড় উস্কানি আসে যখন কেউ একা থাকে, বিশেষ করে প্রযুক্তি হাতে নিয়ে। মোবাইল বা ল্যাপটপ একা ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। চেষ্টা করুন—ঘরে কেউ থাকলে তবেই স্ক্রিনের সামনে বসা, বিশেষ করে রাতে এবং সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউব ব্যবহারের সময়।
৩. রাত এগারোটার আগেই ঘুমিয়ে পড়ুন
রাত যত গভীর হয়, ততই মানুষের অন্তরে কুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ঘুমাতে যাওয়ার সময় দেরি করলে ডিভাইস ব্যবহারের সময় দীর্ঘ হয়, ফলে অনেকেই ‘একটু দেখে নিই’—এই কুপ্রবৃত্তির ফাঁদে পড়ে যায়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আত্মধ্বংসের যাত্রা। তাই যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত এগারোটার পর জাগ্রত না থাকার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে, যখন ঐ সময় আপনার কোনই কাজ না থাকে।
৪. এর ক্ষতিকর দিকগুলো জানুন এবং হৃদয়ে ধারণ করুন
এই আসক্তির ক্ষতি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং শারীরিক, মানসিক এবং পারিবারিক প্রতিটি স্তরেই তা ভয়াবহ। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত, পর্নোগ্রাফি ও হস্তমৈথুনে আসক্তি ভবিষ্যতে দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্টি, যৌন দুর্বলতা, বিষণ্ণতা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি করে। শুধু আপনার নয়—আপনার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবার—সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই সামান্য ভোগের কারণে।
আর পরকালের কথা তো বলাই বাহুল্য—পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এইসব কাজের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি।
৫. দোয়া, যিকির ও ইস্তিগফারে আশ্রয় নিন
একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার আল্লাহর সাথে সম্পর্ক। যিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়। এই নিকটতা যখন হৃদয়ে জমে যায়, তখন অশ্লীলতা ও পাপের প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়। আপনি যখন এই আসক্তির জালে আটকে যাবেন, তখন আল্লাহর কাছে কান্না করে দোয়া করুন, ক্ষমা চান—এই দোয়া-ইস্তিগফারই হতে পারে আপনার মুক্তির শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার।
এই আসক্তি একটি নীরব আত্মঘাতী যাত্রা। সময় থাকতে সতর্ক না হলে, এ পথ থেকে ফিরে না এলে, সামনে অপেক্ষা করছে অন্ধকার ভবিষ্যৎ। কিন্তু হ্যাঁ, ইচ্ছা থাকলে মুক্তির পথ খোলা আছে। লক্ষ্য নির্ধারণ, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, ঘুমের সময় ঠিক রাখা, সচেতনতা অর্জন এবং আধ্যাত্মিক চর্চা—এই পাঁচটি অস্ত্র নিয়েই আপনি ফিরে পেতে পারেন নিজের হারানো সত্ত্বা, হারানো পুরুষত্ব, হারানো ভবিষ্যৎ।
লেখক: অনুবাদক ও গবেষণা কর্মী।রোধ।
Post a Comment