রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ৬ কাজে নিষেধ

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবনের প্রতিটি বাঁকের করণীয় তিনি আমাদের নিখুঁতভাবে শিখিয়ে গিয়েছেন। নিচের হাদিসটি দেখুন-


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنْ بَيْعَتَيْنِ وَعَنْ لِبْسَتَيْنِ وَعَنْ صَلاَتَيْنِ نَهَى عَنْ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَبَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ وَعَنْ اشْتِمَالِ الصَّمَّاءِ وَعَنْ الاِحْتِبَاءِ فِي ثَوْبٍ وَاحِدٍ يُفْضِي بِفَرْجِهِ إِلَى السَّمَاءِ وَعَنِ الْمُنَابَذَةِ وَالْمُلاَمَسَةِ.


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ধরনের বেচা-কেনা করতে, দুইভাবে পোশাক পরিধান করতে এবং দুই সময়ে সালাত (নামাজ) আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (১) ফজরের পর সূর্য পূর্ণরূপে উদিত না হওয়া পর্যন্ত এবং (২) আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।


(৩) আর পুরো শরীর জড়িয়ে কাপড় পরতে এবং (৪) এক কাপড়ে (যেমন লুঙ্গি ইত্যাদি পরে) হাঁটু খাড়া করে এমনভাবে বসতে, যাতে লজ্জাস্থান ওপরের দিকে খুলে যায় – নিষেধ করেছেন। আর (৫) মুনাবাযা ও (৬) মুলামাসা (এর পন্থায় বেচা-কেনা) নিষেধ করেছেন।

-(বুখারি, হাদিস : ৫৮৪)


সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা


ওপরে বর্ণিত হাদিসটিতে তিনটি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে—

১. নামাজ আদায় করার নির্দিষ্ট সময়

২. পোশাক পরিধানের ভঙ্গি

৩. বেচা-কেনার কিছু প্রকার-পদ্ধতি


১. সালাত আদায়ের নিষিদ্ধ সময়


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত এবং আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত হওয়া পর্যন্ত কোনো নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। এর কারণ হলো, এ সময়গুলোতে সূর্য পূজারিরা ইসলাম চায় মুসলমানদের ইবাদত যেন মুশরিকদের কাজের সঙ্গে মিশে না যায়। এ ছাড়া এ সময়গুলোকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে মুসলমানরা নির্ধারিত সময়েই ফরজ ও নফল সালাত আদায় করে, ইচ্ছামতো নয়। সহিহ মুসলিমের এক হাদিসেও এ নিষেধাজ্ঞা বিবৃত হয়েছে- ‘তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৩১)

২. পোশাক পরিধানের ভঙ্গি


পুরো শরীর এক কাপড়ে শক্ত করে জড়িয়ে নেওয়া : এতে হাত-পা নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে ঢাকা থাকে না।


 এক কাপড় (যেমন শুধু লুঙ্গি) পরে হাঁটু খাড়া করে বসা, যাতে লজ্জাস্থান ওপরের দিকে খুলে যায়, এতে সতর তথা শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা ফরজ তা প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইসলাম পরিপূর্ণ শালীনতা ও পর্দার শিক্ষা দেয়। অতএব, পোশাক পরতে হবে এমনভাবে যাতে লজ্জাস্থান সতর (ستر) পুরোপুরি ঢাকা থাকে এবং ওঠা-বসায় কোনো অশোভন দৃশ্য প্রকাশ না হয়।

৩. বেচা-কেনার নিষিদ্ধ পদ্ধতি


হাদিসে ‘মুনাবাযা’ ও ‘মুলামাসা’ নামে দুটি জাহিলি যুগের প্রথাগত বেচা-কেনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


মুনাবাযা : বিভিন্ন দরের একাধিক পণ্যদ্রব্য এক স্থানে রেখে মূল্য হিসেবে একটি অঙ্ক নির্ধারণ করে এ শর্তে বিক্রি করা যে ক্রেতা নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব থেকে পাথর নিক্ষেপ করে যে পণ্যের গায়ে লাগাতে পারবে, উল্লিখিত মূল্যে তাকে তা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ এ পন্থার বেচাকেনা ‘মুনাবাযা’ বলে অভিহিত।

মুলাসামা : একাধিক পণ্যের প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্নভাবে মূল্য নির্ধারণ করে এভাবে বিক্রি করা যে ক্রেতা যেটি স্পর্শ করবে, পূর্বনির্ধারিত মূল্যে তাকে অবশ্যই তা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের বেচাকেনা শরয়ি পরিভাষায় ‘মুলামাসা’ বলে অভিহিত। যেহেতু এতে পছন্দ-অপছন্দের স্বাধীনতা থাকে না, তাই শরিয়ত এ দুটি পন্থাকে নিষিদ্ধ করেছে।


এ ধরনের লেনদেনে অজ্ঞতা, প্রতারণা ও অন্যায্যতার সুযোগ থাকে, তাই ইসলাম তা বাতিল করেছে। ইসলামী ব্যবসার শর্ত হলো— জিনিস পরিষ্কারভাবে জানা থাকবে, দাম নির্দিষ্ট হবে, প্রতারণা ও অস্পষ্টতা থাকবে না।


এই হাদিস আমাদের তিনটি বড় শিক্ষা দেয়—


১. ইবাদত করতে হবে আল্লাহর নির্ধারিত সীমার ভেতরে, অন্যদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মতো নয়।


২. পোশাকে ও ভঙ্গিমায় সর্বদা শালীনতা ও ستر (সতর) বজায় রাখতে হবে।


৩. ব্যবসায় সততা, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা অপরিহার্য; অস্পষ্ট বা প্রতারণামূলক লেনদেন ইসলামে হারাম।করতে হবে।সূর্যকে সিজদা দিত।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post