Top News

কাঁচা পেঁপের রসে যত উপকার

 


আমরা সবাই জানি, পাকা পেঁপে খেতে যেমন মিষ্টি আর খাবার হজমের দারুণ সাহায্য করে। কিন্তু কাঁচা পেঁপে? বেশিরভাগ মানুষই একে খাবার তালিকায় রাখেন না। আর রাখলেও তা সবজি বা ভাজি হিসেবেই খাওয়া হয়। কাঁচা পেঁপে স্বাদে একটু তেতো, একটু কষা হলেও হতে পারে। তবে এমনিতে খেতে খারাপ না। কচকচে সবুজাভ এ সবজির রস চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধ, যার উপকারিতা জানলে আপনি অবাক হবেন।



সাধারণভাবে ট্রপিক্যাল ফল হিসেবে পরিচিত পেঁপে শুধু নয়, তার কাঁচা রূপটিও যে কতটা পুষ্টিকর আর কার্যকরী হতে পারে, তা অনেকেই জানেন না। আজ আমরা জানব, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁচা পেঁপের রস রাখলে আপনার শরীরের কীভাবে উপকার পাহজমে দুর্দান্ত সহায়ক



কাঁচা পেঁপেতে আছে এক শক্তিশালী এনজাইম। পাপাইন নামের এ এনজাইম শরীরে খাবারের প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। এই এনজাইমের কারণে ভারী খাবারের পর পেট ভার হওয়া, গ্যাস কিংবা অম্বলের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। নিয়মিত এই রস পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমজনিত সমস্যাও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আশরীর ঠান্ডা ও হাইড্রেটেড রাখে



কাঁচা পেঁপের রসে প্রায় ৮৮ শতাংশ পানি থাকে। ফলে এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গরমের দিনে এটি প্রাকৃতিক কুল্যান্টের মতো কাজ করে। এ ছাড়া হালকা ডায়ুরেটিক হিসেবেও কাজ করে, অর্থাৎ শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।



ওজন কমাতে সহায়ক



ওজন কমাতে চান? প্রতিদিন এক গ্লাস কাঁচা পেঁপের রস হতে পারে আপনার নতুন বন্ধু। এতে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার ও এনজাইম, যা মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। কম ক্যালোরির এই রস সকালে খালি পেটে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।



ত্বক করে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার



ত্বকে ব্রন, দাগ বা রঙের পার্থক্য দেখা দিলে কাঁচা পেঁপের রস হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ ও সি, যা ত্বকের মরা কোষ সরিয়ে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এই রস শরীরের অভ্যন্তর থেকে টক্সিন দূর করে, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, মসৃণ ও প্রাণবন্ত।



রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়



শরীরকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত রাখতে কাঁচা পেঁপের রস বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিনস ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান। এ উপাদানগুলো আমাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় এই রস নিয়মিত খেলে ঠান্ডা, জ্বর বা সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে।



চোখের যত্নে কার্যকর



সারাদিন কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে চোখের ওপর চাপ পড়ে। কাঁচা পেঁপেতে থাকা ক্যারোটিনয়েড। ভিটামিন এ তৈরিতে যা সাহায্য করে। এটি চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। গবেষণা বলছে, গাজর বা টমেটোর তুলনায় কাঁচা পেঁপেতে ক্যারোটিনয়েডের পরিমাণ বেশি, ফলে এটি চোখের ক্লান্তি কমায় এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।



প্রতিদিনের ডায়েটে এ ছোট সংযোজন দিতে পারে বড় উপকার



স্বাদে একটু অন্যরকম লাগলেও, পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁচা পেঁপের রস শরীরের ভেতরের যত্ন নেয়। এটি হজম শক্তি বাড়ায়, ত্বক ও চোখের যত্ন নেয় এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কাঁচা পেঁপের রস হতে পারে আপনার সুস্থ জীবনের এক নতুন অভ্যাস। চলুন জেনে নেই কীভাবে বানাবেন এই পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার।



উপকরণ



# কাঁচা পেঁপে : ১ কাপ (ছেলা ও কিউব করে কাটা)



# পানি : ১ থেকে ১.৫ কাপ (রস পাতলা বা ঘন করার জন্য, আপনার পছন্দ অনুযায়ী)



# লেবুর রস : ১/২ চা চামচ (স্বাদ ও ভিটামিন সি বাড়ানোর জন্য)



# মধু বা গুঁড় : ১ চা চামচ (না দিলেও চলে, এটি অপশনাল)



# আদা : ছোট একটি টুকরো (হজমে সহায়ক ও সুগন্ধ যোগ করতে, এটিও অপশনাল)



# বিট লবণ বা সাধারণ লবণ : এক চিমটি (অপশনাল)









তৈরির পদ্ধতি



কাঁচা পেঁপের রস তৈরি করতে প্রথমেই একটি কাঁচা পেঁপে ভালোভাবে ধুয়ে এর সবুজ খোসা ছড়িয়ে ফেলুন। এরপর মাঝখান থেকে কেটে ভেতরের বীজগুলো ফেলে দিন। এবার ছোট ছোট কিউব করে কেটে নিন, যাতে পরে ব্লেন্ড করা সহজ হয়।



কাটা পেঁপে, প্রয়োজনমতো পানি, এক-দুই চা চামচ লেবুর রস, একটু মধু (স্বাদ কমানোর জন্য) এবং চাইলে এক টুকরো আদা একসঙ্গে ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করুন যতক্ষণ না রসটি মসৃণ হয়। আপনি যদি একদম পাতলা ও ঝকঝকে রস পছন্দ করেন, তাহলে এটি একটি চালুনি বা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতে পারেন। তবে ফাইবারসহ খেলে তা হজমের জন্য আরও উপকারী।



সবশেষে রসটি একটি গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন। চাইলে কয়েকটি বরফের টুকরো দিয়ে দিন, আর ওপর থেকে এক চিমটি বিট লবণ বা আরও একটু লেবুর রস দিলে স্বাদ হবে আরও তাজা ও সুগন্ধময়। তবে খেয়াল রাখবেন, এটি প্রস্তুত করার পর যত দ্রুত সম্ভব খেয়ে ফেলা জরুরি।



মনে রাখবেন, এ লেখাটি সাধারণ তথ্যভিত্তিক। কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এবং অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো মনে রাখবেন-



# প্রথমবার খেলে অল্প পরিমাণে শুরু করুন, কারণ কাঁচা পেঁপের এনজাইম শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে যদি অভ্যস্ত না থাকেন।



# অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য কাঁচা পেঁপে নিষেধ, কারণ এটি জরায়ুতে সংকোচন ঘটাতে পারে।



# সকালে খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে উপকারী, বিশেষ করে যদি শরীরকে ডিটক্স করতে চান।



# কাঁচা পেঁপের রস তাজা খাওয়াই ভালো, কারণ এনজাইম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়।সে।বে।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post