সাহাবিদের প্রতি নবীজি (সা.)-এর ১০ অসিয়ত

 


কেননা তা আরশের নিচের খাজানার অন্তর্ভুক্ত।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২০৪৪৭)

৩. আল্লাহকে ভয় করা : ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তোমাদের আল্লাহভীতির, শ্রবণ ও আনুগত্যের অসিয়ত করছি, যদিও সে (আমির) একজন হাবশি গোলাম হয়। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নত এবং আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খলিফাদের সুন্নত (নীতি ও পদ্ধতি) অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবেনবীজি (সা.) তাঁর প্রিয় সাহাবিদের বিভিন্ন বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, উপদেশ দিয়েছেন, যা পরবর্তী উম্মতের জন্যও অনুসরণীয়। নিম্নে এমন ১০টি অসিয়ত তুলে ধরা হলো—


১. সময়মতো নামাজ পড়া : আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু (সা.) আমাকে তিনটি উপদেশ দিয়েছেন : ক. নেতা নাক-কান কাটা গোলাম হলেও আমি তার নির্দেশ শুনব এবং আনুগত্য করব, খ. তুমি তরকারি রান্না করলে তাতে বেশি ঝোল রাখবে, অতঃপর তোমার প্রতিবেশীদের দিকে লক্ষ করবে এবং সদিচ্ছাসহ তাদের তা পৌঁছে দেবে, গ. নামাজ তার নির্ধারিত ওয়াক্তে আদায় করবে। যদি দেখো যে ইমাম নামাজ পড়ছেন এবং তোমার নামাজও তুমি পড়েছ, তাহলে তোমার নামাজ তো হয়েছে নতুবা ইমামের সঙ্গে তোমার নামাজ নফল হিসেবে গণ্য হবে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৩)


২. আত্মীয়তা রক্ষা করা : আবু জর (রা.) বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু (সা.) আমাকে সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন—ক. নিঃস্ব মানুষকে ভালোবাসতে এবং তাদের নিকটবর্তী হতে, খ. (জাগতিক বিচারে) আমার নিচের মানুষের প্রতি তাকাতে এবং ওপরের মানুষের দিকে না তাকাতে, গ. আত্মীয়তা রক্ষা করতে যদিও তারা পিছিয়ে যায়, ঘ. কারো কাছে কিছু না চাইতে, ঙ. সত্য বলতে, যদিও তা তিক্ত হয়; চ. আল্লাহর ব্যাপারে সমালোচনাকারীর সমালোচনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করতে, ছ. অধিক পরিমাণে ‘লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ পাঠ কসুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৫২২)


৭. উত্তম গুণাবলি অর্জন করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে চলো। কেননা অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ খুঁজে বেড়িও না, গোয়েন্দাগিরি কোরো না, পরস্পরকে ধোঁকা দিয়ো না, আর পরস্পরকে হিংসা কোরো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ কোরো না এবং পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ কোরো না, বরং সবাই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও।’


(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৬)


৮. তাহাজ্জুদ আদায় করা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন বিষয় সম্পর্কে জানান, যা অনুসরণ করলে আমি জান্নাতে যেতে পারব।’ তিনি বললেন, ‘সালামের প্রসার করো, মানুষকে খাবার খাওয়াও, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কোরো এবং মানুষ যখন ঘুমায় তখন রাত জাগরণ করো (তাহাজ্জুদ পড়ো) এবং স্বস্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো।’


(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৫১)


৯. সময় থাকতে পাঁচ জিনিসের মূল্যায়ন : রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশ প্রদান করত বলেন, ‘পাঁচ জিনিসের আগে পাঁচ জিনিসকে গনিমত মনে কোরো : বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্যের আগে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৩১৯)


১০. সন্তানকে অভিশাপ না দেওয়া : জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বদদোয়া কোরো না নিজের প্রতি, সন্তানের প্রতি, সেবকদের প্রতি, সম্পদের প্রতি। কেননা সময়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুলের সময়ও হতে পারে। ফলে তা তোমাদের জন্য কবুল হয়ে যাবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫৩২)


 


আল্লাহ সবাইকে নবীজি (সা.)-এর উপদেশ ও অসিয়ত মেনে চলার তাসাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কেননা প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদআত এবং প্রতিটি বিদআত হলো ভ্রষ্টতা।’

(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬০৭)


৪. সর্বদা ইনসাফ করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে সাতটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন। আমিও এসব বিষয়ে তোমাদের অসিয়ত করছি : ক. তিনি আমাকে অসিয়ত করেছেন প্রকাশ্যে ও গোপনে ইখলাস (নিষ্ঠা) রক্ষা করা, খ. সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি সর্বদা ইনসাফ করা, গ. সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার ভেতর ভারসাম্য রক্ষা করা, ঘ. যে আমার প্রতি অবিচার করেছে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া, ঙ. যে আমাকে বঞ্চিত করেছে তাকে দান করা, চ. যে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, ছ. আমার নীরবতা হবে চিন্তা, কথা হবে আল্লাহর স্মরণ এবং দৃষ্টি হবে শিক্ষা।’


(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৫৩৫৮)


৫. ভাগ্যে সন্তুষ্ট থাকা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত ধরে পাঁচটি কথা বলেন (উপদেশ দেন)।


তা হলো ‘তুমি হারামগুলো থেকে বিরত থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় আবিদ বলে গণ্য হবে; তোমার ভাগ্যে আল্লাহ তাআলা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্বনির্ভর বলে গণ্য হবে; প্রতিবেশীর সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলে প্রকৃত মুমিন হতে পারবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করো তা-ই অন্যের জন্যও পছন্দ করতে পারলে প্রকৃত মুসলমান হতে পারবে এবং অধিক হাসা থেকে বিরত থাকো। কেননা অতিরিক্ত হাস্য-কৌতুক হৃদয়কে মৃতবৎ করে দেয়।’

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৫)


৬. নেক কাজে আল্লাহর সাহায্য কামনা


করা : মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাত ধরে বললেন, হে মুআজ! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি। তিনি বললেন, হে মুআজ! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়াটি কখনো পরিহার করবে না : ‘আল্লাহুম্মা আঈন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।’ (হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন)।ওফিক দিন। আমিন।রতে।।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post