হার্ট অ্যাটাককে সাধারণত হঠাৎ বুকের ব্যথা বা তীব্র অস্বস্তির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কিন্তু সবসময়ই এমন স্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না। অনেক সময় হৃদরোগ নীরবে এগিয়ে আসে এবং শরীর ছোট ছোট সংকেত দেয়, যা আমরা উপেক্ষা করি বা অন্য কোনো কারণে হয়েছে ভেবে ভুল করি। তাই হার্ট অ্যাটাকের নীরব সংকেতগুলো চেনা খুবই জরুরি। কারণ সময়মতো সতর্ক হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সংকেত বুকের বদলে শরীরের অন্য অংশেও দেখা দেয়। যেমন হঠাৎ করে চোয়াল, ঘাড়, কাঁধ বা পিঠে ব্যথা শুরু হতে পারে। বিশেষ করে বাম হাতে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। অনেকেই মনে করেন হয়তো হাড়ের ব্যথা বা পেশির টান পড়েছে। কিন্তু যদি এই ব্যথা বারবার হয় বা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়, তাহলে সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হলে শরীর এভাবেই সংকেত দেয়।
শ্বাসকষ্টও একটি নীরব সংকেত। সাধারণত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে একটু হাঁপ ধরা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি খুব অল্প হাঁটাহাঁটি বা সিঁড়ি ভাঙলেই দম বন্ধ হয়ে আসে, তাহলে সেটি হৃদরোগের কারণে হতে পারে। হৃদপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে না পারলে ফুসফুসে চাপ তৈরি হয়, আর তার ফলেই শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এ ধরণের পরিবর্তনকে হালকা করে দেখা উচিত নয়।
অনেকের ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা বা বুকে অস্বস্তি দেখা দেয়, যা সাধারণ অম্বল বা গ্যাস্ট্রিক ভেবে অবহেলা করা হয়। পেটে ভারি লাগা, বমি ভাব বা বুকজ্বালা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে সেটি হৃদয়ের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। বিশেষ করে যদি এসব উপসর্গ খাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হয় বা ওষুধ খাওয়ার পরও না কমে, তবে অবশ্যই ডাক্তারকে দেখানো উশরীরে ক্লান্তি আসা অনেকের কাছে সাধারণ ব্যাপার। কাজের চাপ, ঘুমের ঘাটতি বা মানসিক চাপের কারণে আমরা প্রায়ই ক্লান্ত বোধ করি। কিন্তু যদি অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে শরীরে দুর্বলতা বা অকারণে অবসাদ দেখা দেয়, তাহলে সেটি হৃদযন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে যখন সামান্য কাজেই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা আগের মতো শক্তি থাকে না, তখন এটি শুধু সাধারণ ক্লান্তি নয়, হার্ট অ্যাটাকের আগাম বার্তাও হতে পারেহার্ট অ্যাটাকের নীরব সংকেতগুলো চেনা এবং সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোকে সাধারণ সমস্যা ভেবে এড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই যদি নিয়মিত অকারণে ক্লান্তি আসে, শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, শরীরের উপরের অংশে অস্বাভাবিক ব্যথা দেখা দেয় বা হজমজনিত সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। জীবন বাঁচাতে সচেতনতা ও সতর্কতা অনেক সময় ওষুধের থেকেও বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে।ঘাম হওয়াও একটি নীরব সংকেত হতে পারে। গরম আবহাওয়া বা শারীরিক পরিশ্রমে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘাম হতে শুরু করে বা সামান্য কাজেই ঘেমে যান, তবে এটি শরীরের ভেতরে হৃদযন্ত্রের জটিলতার ইঙ্গিত দিতে পারে। অনেক সময় রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখা যায় শরীর ভিজে গেছে, যা হৃদরোগের আগাম সতর্কবার্তা হতে পারে।
ঘুমের ধরণে পরিবর্তনও লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। অনেক সময় যারা আগে ভালো ঘুমাতেন, হঠাৎ করে তারা বারবার রাতে জেগে ওঠেন বা অস্বস্তি অনুভব করেন। আবার অনেকেই অজানা কারণে অনিদ্রায় ভোগেন। হৃদয়ের কার্যকারিতায় সমস্যা হলে শরীরে এ ধরণের প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা হৃদকম্পনও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা বা হালকা বমিভাব হয়। রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া বা রক্তপ্রবাহে বাধার কারণে এ রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে কখনও এমন সমস্যায় ভোগেননি, তাদের হঠাৎ করে এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত।
মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সংকেত অনেক সময় ভিন্ন রকম হয়। তারা হয়তো চরম বুক ব্যথা না পেয়ে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, হজমের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখাতে পারেন। এজন্যই মহিলাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক সময় দেরিতে ধরা পড়ে।চিত।
Post a Comment