ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ কিছু নিয়ম

 ওজন নিয়ন্ত্রণ আজকের দিনে সবার জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যস্ত জীবনযাপন, অনিয়মিত খাবার, কম শারীরিক পরিশ্রম আর মানসিক চাপ আমাদের শরীরকে ধীরে ধীরে ভারী করে তুলছে। অনেকেই মনে করেন ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা একটি কঠিন কাজ। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। নিয়মিত কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই ওজনকে সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এতে কোনো জটিল নিয়ম মানার দরকার নেই, বরং সহজ কিছু অভ্যাসই যথেষ্ট।প্রথমেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা সবচেয়ে জরুরি। অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য একেবারে না খেয়ে থাকতে চান। এটি একদমই সঠিক উপায় নয়। শরীরকে বঞ্চিত করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বরং এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় উল্টো বেশি খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। সঠিক উপায়ে খেতে হবে, অর্থাৎ খাবার কমিয়ে না দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল-চর্বি, ফাস্টফুড ও সফটড্রিংকস কমিয়ে দিলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে পারে না। এর বদলে শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, মাছ, ডিম ও ভাত বা রুটি পরিমাণমতো খেলে শরীর সুস্থ থাকে আবার ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে খাওয়া একটি ভালো অভ্যাস। দ্রুত খেলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খেয়ে ফেলা হয়, অথচ শরীর তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারে না পেট ভরে গেছে কি না। ধীরে ধীরে খেলে পেট ভরা অনুভূতি দ্রুত আসে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। পানি শরীরের বিপাকক্রিয়া সচল রাখে, অতিরিক্ত ক্যালোরি পুড়তে সাহায্য করে এবং অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা দমন করে। অনেক সময় আমরা পিপাসাকে ক্ষুধা ভেবে বেশি খেয়ে ফেলি। তাই যথেষ্ট পানি খাওয়ার অভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।শরীরচর্চা বা শারীরিক কার্যকলাপও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যেকোনো ধরনের ব্যায়াম শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। যারা ব্যায়ামের জন্য আলাদা সময় বের করতে পারেন না, তারা সহজ কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, যেমন লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করা, কাছাকাছি কোথাও গেলে হেঁটে যাওয়া বা বাসায় হালকা শারীরিক কাজ করা। এসব ছোট ছোট অভ্যাস শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং ধীরে ধীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।


ঘুমের বিষয়েও সচেতন হতে হয়। অনিয়মিত বা কম ঘুম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এর ফলে ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই নিয়মিত রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো জরুরি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে শুধু বিশ্রামই দেয় না, ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করেওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। দুশ্চিন্তা, চাপ বা হতাশা অনেক সময় অজান্তেই অতিরিক্ত খাওয়ার দিকে ঠেলে দেয়। অনেকেই মানসিক চাপ কমানোর জন্য খাবারে আশ্রয় নেন। এটি ধীরে ধীরে ওজন বাড়ায়। তাই মানসিকভাবে শান্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত ধ্যান, প্রার্থনা, বই পড়া বা নিজের পছন্দের কাজে সময় দেওয়া মনকে প্রশান্ত রাখে এবং অপ্রয়োজনীয় খাওয়া কমিয়ে দেয়।


ওজন নিয়ন্ত্রণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়মিত অভ্যাস ধরে রাখা। হঠাৎ করে অনেক পরিবর্তন আনা যায়, কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়। তাই ছোট ছোট অভ্যাস দিয়ে শুরু করতে হবে। যেমন, প্রতিদিন খাবারের প্লেটে অল্প পরিমাণ শাকসবজি রাখা, রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাওয়া বা প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করা। ধীরে ধীরে এসব অভ্যাস বাড়ালে শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয় এবং তা দীর্ঘ সময় ধরে রাখা যায়।


ওজন নিয়ন্ত্রণ কোনো একদিনের কাজ নয়। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ধৈর্য ধরে সহজ কিছু নিয়ম মানলেই শরীর সুস্থ থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। শরীরের জন্য ক্ষতিকর উপায়ে হঠাৎ করে ওজন কমানোর চেষ্টা করার দরকার নেই। বরং নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললেই শরীর নিজে থেকেই সঠিক ওজনে ফিরে আসে। সুস্থ জীবনযাপনই হলো ওজন নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ উপায়।।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post