প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান না করলেই কিডনির ক্ষতি হয়

 মানুষের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। এটি আমাদের দেহের ভেতরের অতিরিক্ত বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলে দেয় এবং শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই কিডনিকে বলা হয় শরীরের প্রাকৃতিক ফিল্টার। যদি আমরা প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি না খাই তবে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং ধীরে ধীরে এর ক্ষতি হতে থাকে। কিডনির ক্ষতি মানে শুধু প্রস্রাবের সমস্যাই নয়, বরং পুরো শরীরের জন্য ভয়ানক বিপদ।পানি আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। শরীরের প্রতিটি কোষ সঠিকভাবে কাজ করতে পানি প্রয়োজন। ঘাম, প্রস্রাব, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিদিন শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। এই পানি পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। কিন্তু অনেকে ব্যস্ততার কারণে কিংবা অভ্যাসবশত দিনে খুব কম পানি পান করেন। কারও আবার ধারণা, তেষ্টা না পেলে পানি খাওয়ার দরকার নেই। এই ভুল ধারণার কারণে কিডনিতে নানান সমস্যা দেখা দেয়।যখন শরীরে পানির ঘাটতি হয়, তখন প্রস্রাব ঘন হয়ে যায়। ঘন প্রস্রাবের মাধ্যমে কিডনির ভেতরে লবণ, ইউরিক এসিড বা অন্যান্য খনিজ পদার্থ জমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এগুলো একসাথে জমে কিডনিতে পাথর তৈরি করে। কিডনিতে পাথর হলে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং অনেক সময় অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করতে হয়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে প্রস্রাব পাতলা থাকে এবং ক্ষতিকর পদার্থ সহজেই বের হয়ে যায়।


শুধু পাথর নয়, কম পানি খাওয়ার কারণে কিডনির রক্তপ্রবাহেও প্রভাব পড়ে। কিডনি ঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত রক্ত ও পানি প্রয়োজন। যখন শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তখন রক্ত ঘন হয়ে যায় এবং কিডনির কোষগুলো যথেষ্ট অক্সিজেন পায় না। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে কিডনি ফেইলিওরের মতো মারাত্মক রোগ হতে পাকিডনির ক্ষতি হলে তার প্রভাব সারা শরীরে পড়ে। শরীরে পানি জমে গিয়ে হাত-পা ফুলে যেতে পারে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করাই সবচেয়ে সহজ সমাধান।এখানে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে পানি মানে কেবলমাত্র বিশুদ্ধ পানি। অনেকে মনে করেন চা, কফি বা কোমল পানীয় খেলে পানির চাহিদা পূরণ হয়। কিন্তু এগুলো শরীরে উল্টো পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে, কারণ এসব পানীয়তে ক্যাফেইন ও চিনি থাকে যা শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। তাই কিডনিকে রক্ষা করতে চাইলে চা-কফির বদলে খাঁটি পানি পান করা জরুরি।


বিশেষ করে গরমকালে এবং যারা নিয়মিত বাইরে কাজ করেন তাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। এই সময়ে কম পানি খেলে কিডনির ক্ষতির ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। এছাড়া যারা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাদের কিডনি সাধারণত দুর্বল থাকে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা আরও বেশি জরুরি।


ডাক্তাররা সাধারণত দিনে অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন। তবে এটি নির্ভর করে বয়স, কাজের ধরণ, আবহাওয়া এবং শরীরের ওজনের ওপর। কেউ যদি প্রচুর ঘামেন তবে বেশি পানি প্রয়োজন হবে। আবার যাদের কিডনির বিশেষ কোনো সমস্যা রয়েছে তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পানি খাওয়া উচিত।


অনেক সময় আমরা তেষ্টা লাগার আগেই শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়ে যায়। তাই শুধু তেষ্টা পেলে পানি খাওয়ার অপেক্ষা করা উচিত নয়। নিয়ম করে দিনে কয়েকবার পানি পান করতে হবে। ঘুম থেকে ওঠার পর এক গ্লাস পানি, প্রতিবার খাবারের আগে ও পরে পানি, এবং কাজের ফাঁকে ফাঁকে পানি খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং কিডনি সুস্থপর্যাপ্ত পানি খাওয়া শুধু কিডনির জন্য নয়, আমাদের ত্বক, হজমপ্রণালী, মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারী। যারা নিয়মিত পানি পান করেন তাদের দেহে টক্সিন জমে না, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু পানি কম খাওয়ার অভ্যাস শরীরের ভেতরে নীরবে ভয়ানক ক্ষতি করতে থাকে, যা আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না।


তাই বলা যায়, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনিকে রক্ষা করার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায়। আজকের ব্যস্ত জীবনে ছোট একটি বোতল সাথে রাখা এবং নিয়মিত পানি পান করার অভ্যাস করলে ভবিষ্যতে কিডনি রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। সুস্থ কিডনি মানে সুস্থ শরীর, আর সুস্থ শরীর মানেই সুখী জীবন। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। 

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post