অ্যালকোহল ও তেল-চর্বি যেভাবে লিভারের ক্ষতি করে

 


অ্যালকোহল ও তেল-চর্বি লিভারের ক্ষতি কিভাবে করে তা বোঝার জন্য আগে আমাদের জানতে হবে লিভারের কাজ কী। লিভার হলো মানুষের দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে, খাবার থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি ভেঙে শরীরে ব্যবহারযোগ্য করে তোলে এবং ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে। লিভার আমাদের শক্তি সঞ্চয় করে রাখে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। কিন্তু আমরা যখন অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করি বা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাই, তখন লিভার ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে এবং নানা জটিল রোগ দেখা দেয়।




অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। যখন কেউ মদ্যপান করে, তখন অ্যালকোহল সরাসরি লিভারে পৌঁছে যায় এবং সেখানে তা ভেঙে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করে। এর মধ্যে অ্যাসিট্যালডিহাইড নামের এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয় যা লিভারের কোষকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। নিয়মিত অ্যালকোহল পান করলে লিভারের কোষে প্রদাহ হয়, কোষ ফুলে ওঠে এবং ধীরে ধীরে তা নষ্ট হয়ে যায়। প্রথমে "ফ্যাটি লিভার" নামের একটি অবস্থা তৈরি হয় যেখানে লিভারের ভেতর অতিরিক্ত চর্বি জমে যায়। এ সময় অনেক সময় কোনো উপসর্গ না থাকলেও লিভার ভেতরে ভেতরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। দীর্ঘদিন মদ্যপান করলে প্রদাহ থেকে "অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস" হতে পারে এবং শেষপর্যন্ত লিভারের কোষ শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলা হয় "সিরোসিস"। সিরোসিস হলে লিভারের স্বাভাবিক টিস্যু ধ্বংস হয়ে শক্ত দাগের মতো টিস্যু তৈরি হয়। ফলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং লিভার আর তার কাঅন্যদিকে অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবারও লিভারের জন্য সমান ক্ষতিকর। যখন কেউ বারবার ভাজাপোড়া, জাংক ফুড, অতিরিক্ত ঘি, মাখন বা লাল মাংস খায়, তখন শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে শুরু করে। এর একটি বড় অংশ লিভারে জমে গিয়ে "নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ" তৈরি করে। এই রোগের শুরুতে খুব বেশি উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে চর্বি জমে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং তা "স্টিয়াটোহেপাটাইটিস" নামের গুরুতর রূপ নিতে পারে। এ অবস্থায় লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রদাহ বাড়তে থাকে এবং পরবর্তীতে সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে।


অ্যালকোহল ও অতিরিক্ত তেল-চর্বি দুটোই লিভারে একই ধরনের ক্ষতির চক্র তৈরি করে। প্রথমে চর্বি জমা হয়, তারপর প্রদাহ দেখা দেয়, তারপর টিস্যু শক্ত হয়ে যায় এবং শেষপর্যন্ত লিভার অকেজো হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ঘটে এবং অনেক সময় মানুষ বুঝতেই পারে না যে তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাধারণত শরীরে দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, পেটে অস্বস্তি, জন্ডিস, হাত-পা ফুলে যাওয়া, এমনকি রক্তক্ষরণের মতো উপসর্গ দেখা দিলে বোঝা যায় লিভারের ক্ষতি অনেকটাই এগিয়েছে।


গবেষণায় দেখা গেছে, লিভার হলো এমন একটি অঙ্গ যা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আবার নিজেকে পুনর্গঠন করার ক্ষমতা রাখে। তবে যদি ক্ষতি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এবং কোষ স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তখন আর তা ফেরানো যায় না। তাই অ্যালকোহল সীমিত করা বা একেবারে বর্জন করা এবং তেল-চর্বিযুক্ত খাবারের বদলে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া লিভার রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত পানি পান করলেও লিভার সুস্থ থাঅতএব, অ্যালকোহল এবং অতিরিক্ত তেল-চর্বি আমাদের লিভারের জন্য নীরব ঘাতক। এরা ধীরে ধীরে লিভারের কোষ নষ্ট করে, প্রদাহ ও দাগ সৃষ্টি করে এবং শেষপর্যন্ত লিভারকে অকার্যকর করে তোলে। লিভার ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না, তাই এখন থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই পারে আমাদের লিভারকে সুস্থ ও কার্যক্ষম রাখতে সঠিকভাবে করতে পারে না।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post