কর্মব্যস্ত দিনে পানির অভাব ক্লান্তি ডেকে আনে। আমরা প্রায়ই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা এবং কাজের চাপের মধ্যে নিজেদের ভুলে যাই। সকাল থেকে রাত অবধি দৌড়াদৌড়ি, অফিসের চাপ, পড়াশোনা বা ব্যবসার দায়িত্ব— সবকিছু মিলিয়ে আমরা অনেক সময় জল পান করতে ভুলে যাই। অথচ আমাদের শরীরের জন্য পানি অপরিহার্য। শরীরের প্রতিটি কোষ ঠিকভাবে কাজ করতে পানি প্রয়োজন। যখন আমরা যথেষ্ট পানি নেই, তখন শরীর ধীরে ধীরে ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, মনোযোগহীনতা এবং এমনকি হজমের সমস্যা শুরু করে।পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গরমে বা কর্মব্যস্ত দিনে আমরা প্রচুর ঘাম নিঃসৃত করি। ঘামের মাধ্যমে আমরা শরীরের পানি হারাই। যদি সেই পানি ঠিকমতো পূরণ না হয়, তবে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। এতে মাথা ভারি অনুভূত হয়, চোখের নিচে অন্ধকার দাগ দেখা দেয় এবং মনোযোগ কমে যায়। অনেক সময় আমরা এই সমস্যাগুলোকে শুধুই ‘ক্লান্তি’ বা ‘ঘুম কম হওয়ার’ কারণে ভাবি। কিন্তু আসলে পানি কম হওয়াই এর মূল কারণ হতে পারে।পানি আমাদের দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। আমরা দিনে যত খাই, তার প্রক্রিয়াজাতকরণে শরীরের বিভিন্ন অংশে অনেক ক্ষতিকর পদার্থ জমা হয়। কিডনি এই পদার্থগুলো বের করতে কাজ করে। কিন্তু যদি পর্যাপ্ত পানি না থাকে, কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে থাকে। এর ফলে আমরা বেশি ক্লান্তি অনুভব করি, সজাগ থাকা কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
কর্মব্যস্ত দিনে পানির অভাব শুধু শারীরিক ক্লান্তিই ডেকে আনে না, এটি মানসিক ক্লান্তিও বাড়ায়। পানি কম হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। আমরা সহজে ভুল করি, মনোযোগ হারাই এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। অফিস বা পড়াশোনায় কাজে মন বসে না, সৃষ্টিশীল চিন্তা আসতে বাধা হয়। অনেক সময় মানুষ এমন অবস্থাকে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হিসেবে ভাবলেও, মূল কারণ হতে পারে শরীরে পানি কম থাকা।
পানি কম থাকলে হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। খাবার হজমের জন্যও পানি প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পানি না থাকলে হজম ধীর হয়, পেট ফুলে যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অম্বল দেখা দিতে পারে। অনেকেই দিনে প্রচুর কফি বা চা পান করেন, কিন্তু এগুলো দেহের পানির চাহিদা পূরণ করে না। বরং এগুলো আমাদের আরও ডিহাইড্রেশন বা পানি কম হওয়ার সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই কর্মব্যস্ত দিনে নিয়মিত পানি পান খুবই গুরুত্বপূপ্রাকৃতিকভাবে আমাদের দেহ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি নিয়ে গঠিত। শরীরের এই পানি ঠিকঠাক রাখতে না পারলে সব ধরণের শারীরিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। শুধু ব্যস্ত জীবন নয়, শারীরিক পরিশ্রম, গরম আবহাওয়া, ঘাম, দীর্ঘ সময় কথা বলা বা মনোযোগ দেওয়া—সবই শরীরের পানি কমিয়ে দেয়। এজন্য আমাদের দিনে অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে। ছোট ছোট পরিমাণে কিন্তু নিয়মিত পানি পান করলে শরীর সতেজ থাকে, ক্লান্তি দূর হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
সাধারণত আমরা পানির গুরুত্বকে উপেক্ষা করি। কিন্তু কর্মব্যস্ত দিনে যদি আমরা পানি নিয়মিত গ্রহণ করি, তবে শুধু শারীরিক ক্লান্তি কমে না, মানসিক সতেজতাও বৃদ্ধি পায়। মাথা হালকা থাকে, মন ভালো থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন কাজ সহজে হয়। তাই প্রতিদিন কাজের মধ্যে ছোট ছোট বিরতিতে পানি পান করা উচিত। এক গ্লাস পানি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সতেজতাও ফিরিয়ে আনে।
কর্মব্যস্ত দিনে পানি পান করা কোনো অপশন নয়, এটি একটি জরুরি প্রয়োজন। পানি কম হলে ক্লান্তি আসবে, মনোযোগ কমবে এবং শরীর ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। তাই আমাদের উচিত দিনের শুরু থেকে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করা, অফিসে বা পড়াশোনার সময়ে নিয়মিত পানি গ্রহণ করা এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা। পানি আমাদের জীবনের অমূল্য উপাদান। এটি না থাকলে শুধু ক্লান্তিই নয়, শরীর ও মনের নানা সমস্যা দেখা দেয়। কাজের ব্যস্ততা যতই থাকুক, আমাদের শরীরের পানি চাহিদা পূরণ করা অবশ্যএছাড়া ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। সকালে শরীর স্বাভাবিকভাবে ডিহাইড্রেশনের দিকে চলে যায়। ঘুমের সময়ে আমরা পানি পান করি না, ফলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সকালে ফল খেলে সেই ঘাটতি সহজেই পূরণ হয়। বিশেষ করে তরমুজ, কমলা, আঙুর, আপেল বা পেঁপে খেলে শরীর পর্যাপ্ত পানি পায় এবং কোষগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।ফল শরীরকে শুধু শক্তি জোগায় না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। সকালে খাওয়ার ফলে এতে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপাদান শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। এর ফলে সর্দি-কাশি, সংক্রমণ বা ক্লান্তি কম হয়। যারা নিয়মিত সকালে ফল খেয়ে থাকেন তাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল থাকে এবং বয়সের ছাপ সহজে পড়ে না।
সকালে ফল খাওয়ার আরেকটি বড় উপকারিতা হলো হজমের সুবিধা। ভারী নাশতা খাওয়ার আগে যদি ফল খাওয়া হয়, তবে এতে থাকা আঁশ বা ফাইবার অন্ত্রের কার্যক্রমকে সক্রিয় করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, পেট পরিষ্কার থাকে এবং সারাদিন হালকা অনুভূত হয়। ফাইবার রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে
Post a Comment