ছেলেবেলায় কোথায় যেন শুনেছিলাম—‘করলা তিতা, কিন্তু শরীরের মিতা’। দাদি–নানিদের কেউ বলে থাকবেন নিশ্চয়ই। তখন তো বুঝিনি, কিন্তু বয়স যত বাড়ছে, ততই উপলব্ধি করছি, করলা সত্যিই মিতা।প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও চীনা চিকিৎসায় করলা ব্যবহার হয়ে আসছে হজমশক্তি বাড়াতে, রক্তে শর্করার ভারসাম্য রাখতে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে। আধুনিক গবেষণাও প্রমাণ করেছে এর বহুমুখী উপকারিতা। করলার রস ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, শরীরকে ডিটক্স করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। জেনে নিন করলার রসের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা।
১. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা সংস্থা বায়োমেড সেন্ট্রালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করলার রস প্রাকৃতিকভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে। ভিটামিন সি, জিংক এবং ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে লড়াই করতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যাল কমায়, প্রদাহ কমায় এবং অসুস্থ হলে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করে। নিয়মিত করলার রস খেলে, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি ও কাশি কম লাগে।
২. হজমশক্তি বাড়ায় ও পেটফাঁপা দূর করে
করলার রস প্রাচীনকাল থেকেই হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। ফাইবার বা খাদ্য আঁশে সমৃদ্ধ বলে মলত্যাগ নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রাকৃতিক পাচন এনজাইম থাকে, যা খাবার দ্রুত ভেঙে শরীরের পুষ্টি শোষণ সহজ করে। যাঁরা প্রায়ই পেটফাঁপা, গ্যাস বা হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা খাবারের আগে অল্প পরিমাণ করলার রস খেলে অন্ত্র শান্ত হবে, অস্বস্তি কমে এবং সামগ্রিক হজম স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে তিতা বলে অল্প অল্প করে শুরু করা ভালো।
৩. প্রাকৃতিকভাবে ওজন কমাতে সহায়ক
কঠোর ডায়েট ছাড়াই ওজন কমাতে চাইলে করলার রস হতে পারে এক সহায়ক সংযোজন। এতে ক্যালরি কম, তবে খাদ্য ফাইবার–সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকস বা নাশতা খাওয়া কমিয়ে দেয়।
করলার কিছু যৌগ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে, যা হঠাৎ শর্করা বেড়ে যাওয়া বা নেমে যাওয়া ঠেকায়। এতে প্রায়ই মিষ্টি খাবারের প্রবল চাহিদা তৈরি হয়। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি করলার রস চর্বি কমানোর গতি বাড়াতে পারে।
Post a Comment