অতিরিক্ত দুধ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

 প্রথমত, অতিরিক্ত দুধ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড় ও দাঁতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম কিডনিতে জমে পাথর তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক। অনেক সময় ক্যালসিয়াম রক্তনালীতেও জমে গিয়ে রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।এছাড়া দুধে থাকা ল্যাক্টোজ নামের প্রাকৃতিক চিনি অনেকের শরীরে ঠিকমতো হজম হয় না। যাদের ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা (lactose intolerance) আছে, তারা বেশি দুধ খেলেই পেট ফাঁপা, গ্যাস, ডায়রিয়া, পেটব্যথা ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। এমনকি যাদের আগে এই সমস্যা নেই, তারাও দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত দুধ খেলে হজমের সমস্যায় পড়তে পারেন। কারণ ল্যাক্টোজ ভাঙতে সাহায্যকারী এনজাইমের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারেআরও একটি বিষয় হলো, দুধের চর্বি। ফুলক্রিম দুধে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। এতে ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তারা যদি প্রতিদিন অনেক দুধ পান করেন, তবে শরীরের ক্যালরি গ্রহণ বেড়ে যাবে এবং চর্বি জমতে শুরু করবে।


দুধে থাকা প্রোটিনও অতিরিক্ত হলে শরীরে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনিকে বেশি কাজ করতে বাধ্য করে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কিডনি দুর্বল, তাদের জন্য এটি বেশ ক্ষতিকর। এছাড়া প্রোটিন ভেঙে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা শরীরে বেশি জমে গেলে গেঁটে বাত বা জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি বাড়াদুধে প্রাকৃতিকভাবে কিছু হরমোনও থাকে, যা গাভীর দুধ থেকে আসে। খুব বেশি দুধ খেলে এই হরমোনগুলোর প্রভাব শরীরে জমা হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। এর ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত দুধ খেলে কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি সামান্য বাড়তে পারে, বিশেষ করে প্রোস্টেট ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। যদিও এ বিষয়ে গবেষণা এখনও চলমান, তবে সতর্ক থাকা ভালো।


এছাড়া অনেক সময় বাজারের দুধে মিশ্রণ বা রাসায়নিক থাকে, যা বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে বিষক্রিয়ার মতো প্রভাব ফেলতে পারে। যদি কেউ নিয়মিত অতিরিক্ত দুধ পান করে, তবে এসব ক্ষতিকর উপাদান শরীরে জমে ধীরে ধীরে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অতিরিক্ত দুধ খেলে শরীরের অন্যান্য খাবারের প্রয়োজন কমে যায়। মানুষ মনে করে দুধেই সব পুষ্টি মিলে যাবে, কিন্তু বাস্তবে একটি সুষম খাদ্যতালিকায় সব ধরনের খাবারের ভারসাম্য দরকার। শুধু দুধের ওপর নির্ভর করলে শরীরে ভিটামিন সি, আয়রন, ফাইবার ইত্যাদির ঘাটতি হতে পারে। আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে।


সুতরাং, দুধ যতই পুষ্টিকর হোক না কেন, অতিরিক্ত দুধ খাওয়ার ফলে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত দিনে এক থেকে দুই গ্লাস দুধ যথেষ্ট। তার বেশি খাওয়ার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা, কিডনির স্বাস্থ্য, ওজন এবং হজমশক্তি বিবেচনা করা উচিত। সঠিক পরিমাণে দুধ খেলে উপকার পাওয়া যায়, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে তা উপকারের বদলে ক্ষতি ডেকে আনে। জীবনযাত্রায় ভারসাম্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— এটি খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।


Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post