Top News

ওমেগা-থ্রির গুরুত্ব এবং ঘাটতির বিপজ্জনক লক্ষণ জানালেন পুষ্টিবিদ

 ওমেগা-থ্রি এক ধরনের আবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের শরীর নিজে তৈরি করতে পারে না। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য এটি খাবার বা সাপ্লিমেন্ট থেকে গ্রহণ করতে হয়। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা, চোখের দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখা থেকে শুরু করে প্রদাহ কমানো সব ক্ষেত্রেই ওমেগা-থ্রি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহমুদা আফরিন চ্যানেল 24 অনলাইনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (ALA) – উদ্ভিজ্জ উৎসে (ফ্ল্যাক্সসিড, চিয়া সিড, বাদাম)।

ইকোসাপেন্টেনয়িক অ্যাসিড (EPA) – সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, ম্যাকেরেল, সারডিন)।

ডোকোসাহেক্সেনয়িক অ্যাসিড (DHA ) – মাছ ও মাছের তেলে, বিশেষভাবে মস্তিষ্ক ও চোখের জন্য কার্যকর।

প্রধান উৎস


প্রাণিজ উৎস: ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রের তৈলাক্ত মাছগুলোতে এ উপাদান প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।


স্যালমন: স্যালমন মাছকে ওমেগা-থ্রির অন্যতম সেরা উৎস বলা হয়। এতে থাকা EPA ও DHA হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

ম্যাকেরেল: তুলনামূলক ছোট আকারের হলেও এই মাছ ওমেগা-থ্রিতে সমৃদ্ধ। নিয়মিত খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহাসারডিন: এই ছোট আকারের মাছ সহজলভ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে ওমেগা-থ্রির পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডিও থাকে।

টুনা: জনপ্রিয় এই মাছ প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-থ্রিরও একটি ভালো উৎস। তবে পারদ থাকার কারণে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট: যারা নিয়মিত মাছ খেতে পারেন না, তাদের জন্য ফিশ অয়েল ক্যাপসুল একটি বিকল্প। 

উদ্ভিজ্জ উৎস: শুধু মাছ নয়, উদ্ভিজ্জ খাবার থেকেও শরীর কিছু পরিমাণ ওমেগা-থ্রি পেতে পারে। এগুলো মূলত ALA (Alpha-Linolenic Acid) সরবরাহ করে, যা শরীরে DHA ও EPA-তে রূপান্তরিত হয়।


ফ্ল্যাক্স সিড বা তিসি: তিসির বীজ ও তিসির তেল ওমেগা-থ্রির অন্যতম সেরা ভেজিটেরিয়ান উৎস। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

চিয়া সিড: ছোট হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে ফাইবার, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাশাপাশি প্রচুর ALA থাকে।

ওয়ালনাট (আখরোট): আখরোটকে অনেকেই ‘ব্রেইন ফুড’ বলে থাকেন। এতে থাকা ওমেগা-থ্রি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

সয়াবিন অয়েল: রান্নার তেল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এতে ওমেগা-থ্রি ছাড়াও ভিটামিন ই থাকে, যা কোষকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ক্যানোলা অয়েল: স্বাস্থ্যকর ভেজিটেবল অয়েল হিসেবে ক্যানোলা তেল বেশ জনপ্রিয়। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম এবং ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ঘাটতির লক্ষণ: ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি শরীর ও মস্তিষ্কে নানা ধরনের লক্ষণ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়।


মস্তিষ্ক ও মানসিক স্বাস্থ্য: ওমেগা-থ্রির ঘাটতি হলে মনমরা ভাব বা হতাশা (ডিপ্রেশন) দেখা দিতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যায় এবং মনোযোগ হারানো বা ফোকাসে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় অতিরিক্ত রাগ বা উত্তেজনা এবং উদ্বেগ (Anxiety) দেখা দেয়, যা দৈনন্দিন কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে।


চোখ: চোখ শুষ্ক বা চুলকানো অনুভূত হতে পারে। ঝাপসা দেখা, রাতের বেলায় দেখার অসুবিধা এবং চোখের ক্লান্তি বা জ্বালা ওমেগা-থ্রির ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ।


হৃৎপিণ্ড ও রক্ত সঞ্চালন: ট্রাইগ্লিসারাইড বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং বুক ধড়ফড় বা অনিয়মিত হার্টবিটও লক্ষ্য করা যায়। এটি দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


প্রদাহ ও ইমিউন সিস্টেম: শরীরে ঘন ঘন ব্যথা বা ফোলা দেখা দিতে পারে। জয়েন্টে ব্যথা ও শক্তভাবে অনুভূত হয়। এছাড়া সর্দি-কাশি বা সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়।


ত্বক ও চুল: ত্বক শুষ্ক বা রুক্ষ হয়ে যায়, চুল ভঙ্গুর হয় এবং সহজে পড়ে যায়। ত্বকে ফাটল, লালচে ভাব বা র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়।


শিশুদের ক্ষেত্রে: শেখার ধীরগতি, মনোযোগের ঘাটতি, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল এবং অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা ADHD-এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ওমেগা-থ্রি অপরিহার্য।


শরীরে ওমেগা থ্রির ঘাটতির অবস্থা বুঝবেন যেভাবে: ওমেগা থ্রির ঘাটতি নির্ণয়ের জন্য শরীরের কিছু লক্ষণ অনুসরণ করা যায়। যদি আপনি ৩–৫টি লক্ষণ অনুভব করেন, তবে এটি হালকা ঘাটতির ইঙ্গিত। এই ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার যোগ করা উচিত। ৬–৮টি লক্ষণ থাকলে এটি মাঝারি ঘাটতির সম্ভাবনা, যেখানে শুধু খাদ্য নয়, প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টও নেয়া উচিত। আর যদি ৯টির বেশি লক্ষণ দেখা দেয়, তবে এটি উচ্চ ঝুঁকির অবস্থার চিহ্ন। এমন ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্টওমেগা থ্রির উপকারিতা


হৃৎপিণ্ডের জন্য: ওমেগা থ্রি হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকর।

মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি: এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বজায় রাখে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা উন্নত করে।

জয়েন্ট ও প্রদাহ কমানো: নিয়মিত ওমেগা থ্রি গ্রহণ জয়েন্ট ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

চোখের স্বাস্থ্য: চোখের দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে ওমেগা থ্রি গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য: গর্ভবতী মায়ের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ 

শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের সঠিক বিকাশে ওমেগা থ্রি অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

এই কারণে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ওমেগা থ্রি রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্তবাজারে প্রচলিত ওমেগা থ্রি সাপ্লিমেন্ট ও সতর্কতা: ওমেগা থ্রি সাপ্লিমেন্ট মূলত তাদের জন্য যারা নিয়মিত মাছ বা ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার খায় না। এটি শরীরে ওমেগা থ্রির ঘাটতি পূরণে সহায়ক। নিয়মিত গ্রহণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি উন্নত রাখে এবং চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ওমেগা থ্রি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে প্রদাহজনিত সমস্যা কমে এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম পায়। যারা ব্যস্ত জীবনযাপন করেন বা মাছ কম খান, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী।


অন্যদিকে, সাপ্লিমেন্ট নির্বাচন করার সময় মানসম্মত ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের দিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি। FDA বা GMP অনুমোদিত ব্র্যান্ড যেমন GNC, Blackmores, Nature’s Bounty-এর সাপ্লিমেন্ট নিরাপদ বলে বিবেচিত। তবে নকল বা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য নেয়া বিপজ্জনক হতে পারে। সাপ্লিমেন্টের উৎস, DHA ও EPA-এর পরিমাণ, এবং ভেজালমুক্ত হওয়া নিশ্চিত করতে হবে।


কারা সতর্ক থাকবেন


যারা রক্ত পাতলাকারী ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন) গ্রহণ করেন, গর্ভবতী মায়েরা (ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া), অথবা যাদের মাছ বা সামুদ্রিক খাবারে অ্যালার্জি আছে, তারা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সময় বিশেষ সতর্ক হোন।


ওমেগা থ্রি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, চোখ, জয়েন্ট এবং সমগ্র স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। যাদের খাদ্যাভ্যাসে মাছ বা ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবারের অভাব আছে, তাদের জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ একটি কার্যকর সমাধান। তবে নিরাপদ ও মানসম্মত পণ্য নির্বাচন করা অপরিহার্য, এবং নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাগত অবস্থা ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। খাদ্য ও সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে নিয়মিত ওমেগা থ্রি গ্রহণ করলে শরীরের ঘাটতি পূরণ হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সুস্থ জীবনযাপন সহজ হয়। তাই সঠিক পরিমাণে ওমেগা থ্রি নিশ্চিত করা আমাদের দৈনন্দিন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ জরুরি। শুরু করা উচিতবিদ্যমান।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post