শারীরিক সম্পর্কে অনিহা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে তিক্ততার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্যার জন্য পুরুষদের দায়ী করা হলেও নারীদের মধ্যেও নানান কারণে সম্পর্ক স্থাপনে অনিহা বা অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তবে কাউন্সিলিং ও ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পরামর্শ দিয়েছেন ডার্মাটোলজিস্ট ডা. তাসনিম তামান্না হক। তিনি স্কিনেজ ডার্মাকেয়ারের চীফ কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত।
তামান্না হক জানান, নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কে অনাগ্রহের অন্যতম কারণ হচ্ছে হাইপোএকটিভ সেক্স্যুয়াল ডিজায়ার ডিজঅর্ডার বা সংক্ষেপে একে HSDD বলা হয়। এ সমস্যায় নারীর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে দীর্ঘমেয়াদে বা বারবার অনীহা দেখা যায়।
তনি আরও বলেন, সাধারণত ছয় মাস এর বেশি সময় এরকম সমস্যা থাকলে তাকে HSDD হিসেবে ডায়াগনোসিস করা হয়। এ অনিহার কারণে সম্পর্ক স্থাপন কালে পার্টনার এর সাথে মানসিক দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। নারীর যে শুধু সম্পর্ক স্থাপনে অসুবিধা হয় সেটাই না, সম্পর্ক তৈরির কোন ইচ্ছাও অনেকের মাঝে অনুপস্থিত থাকে। অর্থাৎ তারা বৈবাহিক জীবনে পার্টনারের জৈবিক চাহিদা পূরণে একেবারেই অনাগ্রহী বা অপারগ থাকেন।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যমতে প্রতি দশজনে একজন নারী কোন না কোন কারণে HSDD তে আক্রান্ত। কিছু রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিশেষত পেরিমেনোপোজ ও মেনোপজের পরে নারীদের মধ্যে এ সমস্যার হার অনেক বেশি (২৬%-৫২%)।
কি কি কারণে এই ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে?
√ কিছু মেডিকেল কন্ডিশন যেমন ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ
√ মেডিসিন যেমন ডিপ্রেশনের ঔষধ, ব্লাড প্রেশার কমানোর কিছু মেডিসিন এর জন্যেও এমন হতে পারে যেমন বিটা ব্লকার।
√ দীর্ঘদিন ডিপ্রেশন বা এংজাইটিতে ভুগছেন মানুষের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের মেনোপজের সময় ঘনিয়ে এলে হরমোনের ওঠানামার জন্যেও এমন হতে পারে।
চিকিৎসা: যেহেতু HSDD নানা কারণে হতে পারে তাই কারণ খুজে বের করা সবচেয়ে জরুরি। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ইচ্ছেমত কোন মেডিসিন বিশেষত ঘুমের ঔষধ বা ব্লাড প্রেশারের ঔষধ শুরু বা বন্ধ করা যাবেনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং এই অনেক উপকার পাওয়া যায়। প্রয়োজনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই কাউন্সিলিং এর প্রয়োজন হতে পারে। তবে কোন অসুখের কারণে সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটি ইনভেস্টিগেশনের মাধ্যমে কনফার্ম হওয়া অত্যাবশ্যকীয়।
বিভিন্ন মেডিসিন এখন উপলব্ধ আছে নারীর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা কাটিয়ে ওঠার জন্য কিন্তু ডাক্তারের তত্বাবধানে এগুলো না খেলে অনেক সময় এগুলো মারাত্মক সমস্যা যেমন হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ইত্যাদির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই অবশ্যই ঔষধ খাওয়ার জন্য ফিজিক্যালি ফিট কিনা নিশ্চিত না হয়ে এসব ঔষধ খাওয়া যাবেনা। সঠিক চিকিৎসা ও সাইকোথেরাপি এর সাহায্যে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুখী ও সম্পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব।
Post a Comment