দীর্ঘদিন ধরে ইউরিক অ্যাসিডকে মূলত গাউটের সঙ্গে যুক্ত করা হত। রাতের সময় হঠাৎ জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা, লালচে ভাব, গরম এবং ফোলা Toe-এর মতো উপসর্গগুলোকে গাউটের মূল লক্ষণ হিসেবে ধরা হতো। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড শুধুমাত্র গাউটের সমস্যা নয়। এটি প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হার্ট সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। এমনকি নতুন তথ্য অনুযায়ী, এটি অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।ইউরিক অ্যাসিড হল একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ, যা শরীর তৈরি করে যখন এটি পিউরিন ভাঙে। পিউরিন লাল মাংস, সামুদ্রিক খাবার, বিয়ারসহ কিছু খাবারে পাওয়া যায়। সাধারণত কিডনি ইউরিক অ্যাসিডকে রক্ত থেকে ফিল্টার করে প্রস্রাবে বের করে দেয়। তবে যদি বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় বা কিডনি তা দ্রুত বের করতে না পারে, তাহলে এটি জমা হতে থাকে এবং সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড দীর্ঘ সময় ধরে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে গাউটের মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে। এটি জয়েন্টে প্রচণ্ড ফোলা, ব্যথা এবং stiffness তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। কিডনিতে পাথর, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ এবং কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। গুরুতর ক্ষেত্রে, স্কিনের নিচে তোফি গঠন হতে পারে। তাই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড থাকা ব্যক্তিরা হাইপারটেনশনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা অনুযায়ী, এটি রক্তনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং সময়ের সঙ্গে রক্তচাপ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া, উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ। এটি শরীরের বিপাকজনিত অসামঞ্জস্যের ইঙ্গিতও দিতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত ওজন এবং উচ্চ রক্তচিনির ক্ষেত্রে।
হার্ট সংক্রান্ত ঝুঁকি সম্পর্কেও গবেষকরা সতর্ক করেছেন। উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও প্রযোজ্য যাদের রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নেই। রক্তনালীতে প্রদাহ এবং ক্ষতি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড প্রাথমিকভাবে তেমন লক্ষণ দেয় না। অনেকেই সমস্যার কথা জানে না যতক্ষণ না এটি পর্যাপ্তভাবে জমা হয়। গাউটের আক্রমণ, কিডনি পাথর বা অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিলে মানুষ সচেতন হন। তবে সতর্ক থাকতে হলে প্রাথমিকভাবে জয়েন্টে হালকা ব্যথা বা stiffness, বিশেষ করে বেজোড় Toe, গোড়ালি বা হাঁটুর মধ্যে অনুভূত হলে এবং প্রস্রাবে পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবারে গাউট, হার্ট রোগ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকা, অতিরিক্ত ওজন, পেটের চর্বি বৃদ্ধি এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ বা প্রিডায়াবেটিস পাওয়া উচ্চ ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত বিয়ার, চিনি যুক্ত পানীয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, লাল মাংস ও সামুদ্রিক খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণও ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, জীবনের স্বাভাবিক রুটিনে পরিবর্তন আনা জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মদ্যপান সীমিত করা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই পদক্ষেপগুলো উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হার্ট রোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।
Post a Comment