অবশেষে বাংলাদেশকে সুখবর দিল ভারত


 হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় আসার পরও অব্যাহত থাকে। একাধিক ইস্যু যেমন হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়, সীমান্ত হত্যা, কাঁটাতারের বেড়া – এসব কারণে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ছিল। তবে সম্প্রতি ভারত থেকে বাংলাদেশে একটি বড় সুখবর এসেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি দেখা দেয়। ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, কিন্তু এই সাত মাসেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন থামেনি। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড, কাঁটাতারের বেড়া এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কের অশান্তি বাড়াচ্ছিল। তবে, ভারত থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি ভালো খবর এসেছে যা সম্পর্কের স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করতে পারে।

সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে একটি সুখবর এসেছে। জানা গেছে, ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবিত কূটনীতিক রিয়াজ হামিদুল্লাহর এগ্রিমো (অথরাইজেশন) গ্রহণ করেছে। এর ফলে রিয়াজ হামিদুল্লাহ এখন দিল্লিতে বাংলাদেশের নতুন হাই কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হবেন। তিনি সাবেক হাই কমিশনার মুস্তাফিজুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, রিয়াজ হামিদুল্লাহর এগ্রিমো গ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ঢাকার পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত এই দূত হিসেবে দিল্লি সবুজ সংকেত দিয়েছে, যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু রয়েছে, এবং এখন তার উপর নির্ভর করবে, এই সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে যাবে।

নতুন দূত হিসেবে রিয়াজ হামিদুল্লাহর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তন, শেখ হাসিনার ফেরত পাঠানোর ইস্যু, সীমান্ত হত্যা ও অন্যান্য সমস্যার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেকদিন ধরে অস্থির ছিল। নতুন দূতকে তার অভিজ্ঞতা এবং কূটনৈতিক দক্ষতা দিয়ে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। তবে, রিয়াজ হামিদুল্লাহ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত, কারণ তিনি ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

রিয়াজ হামিদুল্লাহ একজন দক্ষ কূটনীতিক, যিনি বহু বছর ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। তিনি ভারতে পড়াশোনা করেছেন এবং কূটনীতিক হিসেবে সেখানে কাজ করেছেন, যার ফলে ভারত সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন। এর আগে তিনি আঞ্চলিক সংস্থা ও বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক বিষয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। তার বহুপাক্ষিক অর্থনীতি এবং কানেক্টিভিটির প্রতি দক্ষতা বাংলাদেশকে ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে।

ভারত সরকার রিয়াজ হামিদুল্লাহর এগ্রিমো গ্রহণ করার মাধ্যমে, তারা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তরফে গত বছরের নভেম্বরে রিয়াজ হামিদুল্লাহর জন্য একটি ডিমও পাঠানো হয়েছিল, যার মাধ্যমে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখন অনেকাংশে রিয়াজ হামিদুল্লাহর নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করবে। তিনি দক্ষ কূটনীতিক এবং তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কার্যকরী হবে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এবং ভারত নিজেদের মধ্যে চলমান সমস্যাগুলো সমাধান করে আরও মজবুত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

এখন, দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সঠিক সময় এসেছে, এবং এই দিক দিয়ে রিয়াজ হামিদুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে, নতুন দূত হিসেবে তার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও উন্নত এবং স্থিতিশীল হবে।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post