দাঁত ব্রাশ করার সময় বা কুলি করার সময় অনেকেরই মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। কেবল যে দাঁত বা মাড়ির রোগেই এমন হয়, তা-ও নয়। এটি হতে পারে আরও কোনো জটিল রোগের লক্ষণ। তাই এ সমস্যাকে কিছুতেই অবহেলা করা উচিত নয়।
মড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধে যা করতে হবে এ বিষয়ে আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ডা.শারমিন সুলতানা রিজভী। তিনি জানান, এই সমস্যাকে অবহেলা করলে পরবর্তীতে বড় ধরনের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রিজভী বলেন যে সব কারণে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে সেগুলো হলো:
কারণ:
. বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে নিয়মিত মুখ পরিষ্কার না করার কারণে নিঃসৃত লালার বিশেষ উপাদান, মুখের মধ্যের জীবাণু ও খাদ্যকণা মিলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে ডেন্টাল প্লাক নামের সাদা আঠালো পদার্থ তৈরি করে। কিছুদিনের মধ্যে প্লাক শক্ত পাথরে পরিবর্তিত হয়ে মাড়িতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। প্রাথমিক পর্যায়ে মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায়; পরবর্তী সময়ে ব্রাশ করার সময়, শক্ত কিছু খেলে বা আলতো চাপে রক্ত পড়ে। অনেক সময় সুস্থ মাড়িতেও ভুল পদ্ধতিতে ডেন্টাল ফ্লস বা টুথব্রাশের আঘাতে রক্তপাত হতে পারে।
বিশেষ কিছু ভিটামিন বা মিনারেল যেমন ভিটামিন সি, ডি, কে, আয়রনের অভাবে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
. অসামঞ্জস্য কৃত্রিম দাঁত, অর্থোডন্টিক তার বা অন্য কিছুতে আঘাতের কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
রক্তের নানা রোগ যেমন হিমোফিলিয়া থেকে লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের সমস্যা, রক্ত জমাট বাঁধার উপাদানের তারতম্য, ডেঙ্গু, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এইডস প্রভৃতি রোগের প্রাথমিক উপসর্গও হতে পারে মাড়ি থেকে রক্তপাত।
রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের কিছু ওষুধ সেবনেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় বা বিশেষ সময়ে হরমোনের তারতম্যের কারণেও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
. অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ধূমপানসহ নানা কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলেও এমনটা হতে পারে।
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধে প্রতিকার নিয়ে চিকিৎসক জানান, এ সমস্যা প্রাথমিক যত্নের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে অনেক সময় যদি ভালো না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এছাড়া ঘরোয়াভাবে যা করতে হবে তা হলো:
. প্রতিদিন সঠিক নিয়মে সকালে ঘুম থেকে জেগে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
. ভালোমানের পেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন এক টুথপেস্ট ব্যবহার করবে না।
. ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহারের মাধ্যমে দুই দাঁতের মাঝখানে লেগে থাকা খাদ্যকণা দূর করতে হবে।
. নিয়মিত ভিটামিন সি’সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন- আমলকী, কমলালেবু, বাতাবিলেবু, আমড়া ইত্যাদি।
. কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলকুচি করতে হবে।
. ছয় মাস পরপর ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। খুব সহজেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
. কারণ যা-ই হোক, সেটা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া জরুর
Post a Comment