যদি কারো নিকট খোদাবন্দের দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়া হয় আর সে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ফিরিয়ে দেয়, তবে কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় দাঁড়াবে তার মুখে থাকবে না মাংস, না চামড়া, শুধু হাড়ের খটখট শব্দ শোনা যাবে।একদিন রহস্যময় পুরুষ খিজির বনি ইসরায়েলের এক ব্যস্ত বাজারের ভেতর দিয়ে হাঁটছিলেন। বাজারের ভিড়, মানুষের কোলাহল, ক্রয়-বিক্রয়ের আওয়াজ তার মাঝেই এক মুকাতাব দাস তাঁর পথ রোধ করে দাঁড়াল। ভিক্ষুকসুলভ কণ্ঠে সে বলল, হে পরদেশি, আমাকে কিছু সদকা দিন। খোদাবন্দ আপনাকে বরকত দান করবেন। রহস্যময় খিজির শান্ত চোখে তার দিকে তাকালেন। ধীরে ধীরে বললেন, আমি আমার পালনকর্তার উপরই ভরসা করেছি। তিনি যা চান তাই ঘটবে।কিন্তু আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। লোকটি নিরাশ হলো না। সে আবারও অনুরোধ করল, আমি খোদাবন্দের ওয়াস্তে চাইছি, হুজুর। আপনার চেহারায় দানশীলতার আভা দেখি। আপনার কাছে বরকত কামনা করি। খিজির এবারও আগের মতোই উত্তর দিলেন। আমি আমার পালনকর্তার উপরই ভরসা করছি। তিনি যা চান তাই ঘটবে। কিন্তু আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। তবে, একটু থামলেন তিনি। তারপর শান্ত স্বরে বললেন, তুমি চাইলে আমাকে বিক্রি করে দিতে পার। মিসকিন লোকটি বিস্মিত হয়ে বলল, সত্যিই তো? আপনাকে বিক্রি করলে কিছু হবে?
খিজির বললেন, হ্যাঁ, তুমি এক বিরাট দোহাই দিয়ে আমাকে প্রার্থনা করেছ। আমার পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্য আমি তোমাকে নিরাশ করব না। যাও, আমাকে বিক্রি কর।
তারপর লোকটি তাকে বাজারে নিয়ে গেল। এক ক্রেতার হাতে চারশ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করল। খিজির চুপচাপ নতুন প্রভুর ঘরে অবস্থান করতে লাগলেন। অনেকদিন কেটে গেল, অথচ মালিক তাকে কোনো কাজেই লাগালেন না। একদিন খিজির নিজেই বললেন, আপনি তো আমাকে কোনো কাজে ব্যবহার করছেন না। অথচ আপনি তো উপকারের আশাতেই আমাকে ক্রয় করেছেক্রেতা লোকটি মৃদু হাসল। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না। আপনি তো অতিশয় বৃদ্ধ দুর্বল মানুষ। খিজির বললেন, তা হবে না। কর্মহীন থাকাই আমার জন্য কষ্টকর। কাজ দিন। তখন মালিক বললেন, যদি তাই হয়, তাহলে এ পাথরের স্তূপ সরিয়ে দাও। তবে জেনে রেখো, ছয় জন লোক মিলেও একদিনে এগুলো নড়াতে পারে না। তারপর ক্রেতা লোকটি নিজের কাজে চলে গেলেন। ফিরে এসে দেখলেন সব পাথর গায়েব। রহস্যময় খিজির এক মুহূর্তেই তা সরিয়ে ফেলেছেন।নলোকটির চোখ বিস্ময়ে ভরে উঠল। কিছুদিন পর মালিকের সফরের প্রয়োজন হলো। যাওয়ার আগে তিনি খিজিরকে বললেন, আমি আপনাকে আমানতদার মনে করি। আমার অনুপস্থিতিতে পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করুন। খিজির বললেন, ঠিক আছে। তবে কিছু কাজের দায়িত্ব দিয়ে যান। লোকটি হেসে বলল, আমি তো আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না।
তিনি উত্তর দিলেনআমার কাছে কোনো কাজই কষ্টকর নয়। তখন মালিক বলল, তাহলে আমি ফিরে আসা পর্যন্ত ঘরের জন্য ইট তৈরি করতে থাকুন। সফর শেষে ফিরে এসে লোকটি হতবাক হয়ে গেল। শুধু ইট নয়, সম্পূর্ণ একটি প্রাসাদ তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার বাড়ির আঙিনায়। সে রহস্যময় খিজির -এর দিকে তাকিয়ে বলল, খোদাবন্দের দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আপনি কে? খিজির বললেন, তুমি খোদাবন্দের দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছ, তাই বলছি। আমি খিজির।
যার কথা আগেও শুনেছ। এক মিসকিন আমার কাছে সদকা চাইছিল, কিন্তু আমার কাছে কিছুই ছিল না। আবারও সে খোদাবন্দের ওয়াস্তে প্রার্থনা করল। আমি তাকে নিরাশ করিনি, নিজেকেই তার হাতে সমর্পণ করেছি। সে আমাকে বিক্রি করেছে। জেনে রেখো, "যদি কারো নিকট খোদাবন্দের দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়া হয় আর সে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ফিরিয়ে দেয়, তবে কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় দাঁড়াবে তার মুখে থাকবে না মাংস, না চামড়া, শুধু হাড়ের খটখট শব্দ শোনা যাবে।
লোকটি কেঁপে উঠল। বলল, আমি খোদাবন্দের উপর ঈমান আনলাম। হে খোদাবন্দের প্রিয় বান্দা খিজির, আপনাকে অজান্তেই কষ্ট দিয়েছি। খিজির সান্ত্বনা দিলেন। না, তুমি সদাচরণ করেছ। আমার উপর আস্থা রেখেছ। এতে কোনো কষ্ট হয়নি। মালিক বলল, হে খিজির, আমার পরিবার, সম্পদ সবই আপনার জন্য হাজির। আপনি যেমন চান তেমন সিদ্ধান্ত নিন। কিংবা চাইলে এখনই আপনাকে মুক্ত করে দিচ্ছি। খিজির ধীর কণ্ঠে বললেন, আমি চাই তুমি আমাকে মুক্ত কর।
যেন আমি আমার পালনকর্তার ইবাদতে মন দেই। লোকটি তখনই তাঁকে মুক্ত করে দিল। তখন খিজির আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, সব প্রশংসা সেই খোদাবন্দের, যিনি আমাকে দাসত্বে নিপতিত করেছিলেন, আবার তারই ইচ্ছায় মুক্তও করেছেন।,।
Post a Comment