আকিকার তাৎপর্য ও বিধান

 

আকিকা হলো সেই পশু, যা নবজাতকের জন্মের পর তার পক্ষ থেকে জবেহ করা হয়। জাহেলি যুগেও আরবদের মধ্যে আকিকার প্রচলন ছিল। বুরাইদা (রা.) বলেন, জাহেলি যুগে আমাদের কারো পুত্রসন্তান জন্ম নিলে আমরা একটি ছাগল জবেহ করতাম এবং তার মাথায় রক্ত মাখিয়ে দিতাম। যখন আল্লাহ ইসলাম নিয়ে এলেন, তখন আমরা (তার পরিবর্তে) একটি ছাগল জবেহ করতাম, তার মাথা মুণ্ডন করতাম এবং মাথায় জাফরান মাখিয়ে দিতাম।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৪৩)

ইসলামে আকিকার বিধান রয়েছে। সামুরাহ ইবনে জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ (বন্ধক) থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা হবে, তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং তার নাম রাখা হবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৫২২)


আকিকার বিধান : আকিকা করা একটি মুস্তাহাবকেউ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য এটি ত্যাগ করা উচিত নয়, তবে কেউ ত্যাগ করলে তার কোনো গুনাহ হবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী, যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং সে তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করতে ভালোবাসে, সে যেন তা করে। ছেলেসন্তানের জন্য দুটি সমান বয়সী ছাগল এবং মেয়েসন্তানের জন্য একটি ছাগল।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৪২)

নবী (সা.) এই বিষয়টি পালনকারীর ভালোবাসা বা ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, যা প্রমাণ করে যে এটি মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। (তুহফাতুল মাওদুদ : ১৫৭)


মুস্তাহাব আমল হলেও এতে অবহেলা করা উচিত নয়, কারণ নবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে, যা তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবেহ করা হয়, তার মাথা মুণ্ডন করা হয় এবং নাম রাআকিকার হিকমত : আকিকার হিকমত নবী (সা.)-এর এই বাণী থেকে বোঝা যায়, প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে।


১. যদি তার পক্ষ থেকে আকিকা না করা হয় এবং সে শৈশবে মারা যায়, তবে সে তার মাতা-পিতার জন্য শাফায়াত করা থেকে বিরত থাকবে।


২. আকিকা হলো সন্তানকে শয়তান থেকে মুক্ত করার এবং তার থেকে রক্ষা করার একটি মাধ্যম।


ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) আকিকার উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন—

আকিকার অন্যতম উপকারিতা হলো এটি একটি কোরবানি, যা নবজাতকের পক্ষ থেকে দুনিয়াতে তার আগমনের প্রথম দিকেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এর আরেকটি উপকারিতা হলো এটি নবজাতকের বন্ধন মুক্ত করে, কারণ সে তার আকিকার সঙ্গে দায়বদ্ধ থাকে, যতক্ষণ না সে তার মাতা-পিতার জন্য শাফায়াত করে।


এর আরেকটি উপকারিতা হলো এটি একটি ফিদিয়া বা মুক্তিপণ, যার মাধ্যমে নবজাতককে মুক্ত করা হয়, যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইসমাঈল (আ.)-কে একটি দুম্বার মাধ্যমে মুক্ত করেছিলেন। (জাদুল মাআদ : ২/৩২৫)


আকিকার সময় : নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৫৫)


দিন বলতে এখানে শরয়ি দিন। আর শরয়ি দিন হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং প্রত্যেক রাত তার পরবর্তী দিনের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি কেউ সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারে, তাহলে ১৪তম দিনে, তা-ও সম্ভব না হলে ২১তম দিনে আকিকা দেবে। (শরহুল মুহাজ্জাব : ৯/২৪৫)


আকিকা কার ওপর আবশ্যক : আকিকা সন্তানের পিতার সম্পদ থেকে করা হবে—এটাই নিয়ম। তার মায়ের সম্পদ থেকে নয় বা সন্তানের নিজের সম্পদ থেকেও নয়। কারণ পিতাই এসংক্রান্ত হাদিসে প্রথম সম্বোধিত ব্যক্তি।


তবে যদি পিতা অবহেলা করে এবং আকিকা করা থেকে বিরত থাকে, অথবা পিতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তার পক্ষ থেকে কেউ আকিকা করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর পক্ষ থেকে দুটি করে দুম্বা আকিকা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিনবী (সা.)-এর তাঁর নাতিদের পক্ষ থেকে আকিকা করা প্রমাণ করে যে পিতার অনুমতি ও সন্তুষ্টিতে তার কোনো নিকটাত্মীয় আকিকা করতে পারে।


এ থেকে বোঝা যায়, তালাকপ্রাপ্তা মায়ের ওপর তার সন্তানের জন্য আকিকা করা ওয়াজিব নয়। তবে যদি পিতা আকিকা করা থেকে বিরত থাকে বা পিতার দূরত্ব বা জন্মের খবর না জানার কারণে তা করা সম্ভব না হয়, তবে মায়ের জন্য তা করা মুস্তাহাব। আল্লাহ তাকে এর জন্য প্রতিদান দেবেন।


নিজে নিজের আকিকা করা : যদি সন্তান বড় হয়ে যায় এবং তার পিতা তার আকিকা না করে থাকে এবং সে বড় হয়ে নিজের আকিকা করতে চায়, তবে এতে কোনো অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৪৭১৮)


নও মুসলিম নিজের ও সন্তানদের আকিকা : যদি কোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে, তবে সে চাইলে নিজের পক্ষ থেকে এবং সামর্থ্যবান হলে তার সন্তানদের পক্ষ থেকে আকিকা করতে পারে। তবে কাফির সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা করা হবে না। (তানকিহুল ফাতাওয়া আল-হামিদিয়্যা : ২/২১৩)


তবে নাম পরিবর্তনের জন্য পুনরায় আকিকা করা আবশ্যক নয়।


আকিকার পশুর ধরন : সুন্নত হলো, ছেলেসন্তানের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়েসন্তানের জন্য একটি ছাগল আইমাম নববী (রহ.) বলেন, সুন্নত হলো ছেলের জন্য দুটি এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল। তবে ছেলের জন্য একটি ছাগল দিলেও সুন্নতের মূল আদায় হয়ে যাবে। (আল-মাজমু শরহুল মুহাজ্জাব : ৮/৪০৯)


ছাগল ছাড়া অন্য পশু দিয়ে কি আকিকা জায়েজ : কোরবানিতে যে ধরনের পশু জায়েজ, আকিকাতেও তা জায়েজ। অর্থাৎ উট, গরু ও ছাগল।


আকিকার পশুর শর্তাবলি : আকিকার পশুর ক্ষেত্রে কোরবানির পশুর মতোই শর্ত প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ তা ত্রুটিমুক্ত হতে হবে এবং নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ হতে হবে। উটের জন্য পাঁচ বছর, গরুর জন্য দুই বছর, ছাগলের জন্য এক বছর এবং দুম্বার জন্য ছয় মাস। কানা, খোঁড়া, অত্যন্ত রুগ্ণ বা শিং বা কানের অর্ধেকের বেশি ভাঙা পশু দিয়ে আকিকা জায়েজ নয়। (আল-মুগনি : ৭/৩৬৬)


আকিকার গোশত বণ্টন : আকিকার গোশতের হুকুমও কোরবানির গোশতের মতোই। অর্থাৎ আকিকার গোশত পুরোটাই নিজে খেতে পারে, পরিবারের লোকদের খাওয়াতে পারে এবং অন্যদের হাদিয়াও দিতে পারে। তবে মুস্তাহাব হলো কোরবানির গোশতের মতো এরও তিনটি ভাগ করা। এক ভাগ নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বণ্টন করা এবং এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করা। (ইলাউস সুনান : ১৭/১২৭)


যে শিশু মারা গেছে তার জন্য আকিকা : সপ্তম দিনের আগে মৃত্যুবরণকারী শিশুর আকিকা করাও মুস্তাহাব। (আকিকা কে মাসায়েল কা ইনসাইক্লোপিডিয়াএকই পশুতে কোরবানি ও আকিকার নিয়ত করা : কোরবানি ও আকিকা দুটি স্বতন্ত্র ইবাদত হওয়ায় আলাদাভাবে আদায় করাই সর্বোত্তম এবং সুন্নাহর নিকটবর্তী। তবে যদি কেউ কোনো সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি বড় পশুতে কোরবানির সঙ্গে আকিকার অংশ রাখে, তাহলে উভয় ইবাদতই সঠিকভাবে আদায় হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৬/৩২৬)


আকিকা না করে মূল্য সদকা করা : আকিকার মূল্য সদকা করার দ্বার আকিকার ফজিলত লাভ হবে না, বরং অর্থ সদকা করলে আকিকা আদায় হবে না। কারণ আকিকার মূল উদ্দেশ্য হলো জবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। : ৬৯)কিকা করা।স : ৪২১৮)করা হয়।খা হয়। আমল।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post