আল্লাহর নির্দেশে পাথরের পাহাড় থেকে উট বের হয়ে আসার ঘটনা

 

হজরত নুহ (আ.)-এর ছেলে সামের বংশধর ছিল সামুদ সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে হজরত সালেহ (আ.)-কে নবী হিসেবে বাছাই করেন। এ সম্প্রদায় ও নবীর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোরআনে আলোচনা করেছেন।সামুদ ছিল শক্তিশালী ও বীরের জাতি। প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্যবিদ্যায় তাদের বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। পর্বত খোদাই করে তারা বাসস্থান নির্মাণ করত। এই গোত্রের বসবাস ছিল সৌদি আরবের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে হিজর নামক স্থানে; সেই স্থানটি এখন ‘মাদায়েনে সালেহ’ নামে পরিচিত।সামুদ সম্প্রদায় প্রথমে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এক সময় আল্লাহ ও পরকালকে ভুলে যায়, মূর্তিপূজা শুরু করে এবং শিরকে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তাআলা স্বীয় চিরন্তন বিধান অনুযায়ী তাদের হেদায়েতের জন্য হজরত সালেহ (আ.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করেন।হজরত সালেহ (আ.) ছিলেন সম্ভ্রান্ত, বিচক্ষণ, প্রজ্ঞাময়, জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি। যতদিন তিনি ওহিপ্রাপ্ত হননি এবং মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করেননি গোত্রের লোকজন ততদিন তাকে সমীহ ও মান্য করতেন। নবুয়ত লাভের পর তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করতে আহ্বান করেন। তিনি বললেন,

 

হে আমার জাতি, আল্লাহ তাআলার ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। তিনিই জমিন হতে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে তোমাদের বসতি দান করেছেন। অতএব তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তারপর তারই দিকে ফিরে চলো। আমার পালনকর্তা নিকটেই আছেন। কবুল করে থাকেন, সন্দেহ নেই। (সুরা হুদ ৬১)

 


সালেহ (আ.) ছিলেন বিশুদ্ধভাষী এবং উচ্চকণ্ঠের বাগ্মী। বড় বড় সমাবেশে তিনি দাওয়াতের কাজ করতেন। যুক্তির নিরিখে দরদি কণ্ঠে আল্লাহ তাআলার বাণীসমূহ শোনাতেন। মূর্তিপূজার কঠিন পরিণতির কথা বলতেন। আখেরাতের কথা শোনাতেন। জান্নাতের নেয়ামতরাজির কথা বলে তাদের উদ্বুদ্ধ করতেন। জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করতেন। গোত্রের লোকজন যেই মাত্র তার মুখে মূর্তিপূজার অসারতার বাণী শুনলেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা হজরত সালেহ (আ.)-এর প্রজ্ঞা ও পাণ্ডিত্য অস্বীকার করে বললেন, 

 

হে সালেহ, এর আগে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ করো? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহ্বান করছ আমাদের তাতে এমন সন্দেহ রয়েছে যে, সেদিকে মন মোটেই সায় দিচ্ছে না। (সুরা হুহজরত সালেহ (আ.) তাদেরকে বিভিন্নভাবে উপমা ও দৃষ্টান্ত বলে বলে বোঝাতে থাকলেন। বললেন, দুনিয়া চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়। এখানকার ভোগবিলাস ক্ষণিকের মাত্র। সুতরাং তোমরা পরকালের চিন্তা করো।

 

সামুদ জাতির অধিকাংশ লোক হজরত সালেহ (আ.)-কে অস্বীকার করলেন। তবে যুক্তিতর্কে কোনোভাবেই যখন তারা হজরত সালেহ (আ.)-কে সত্যের দাওয়াত থেকে নিবৃত করতে পারলেন না তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন তার কাছে অলৌকিক কোনো দাবি পেশ করবেএকদিন তারা সবাই একত্রিত হয়ে হজরত সালেহ (আ.)-কে বললেন, আপনি যদি সত্যি আল্লাহর নবী হন তবে আমাদেরকে কাতেবা পাহাড়ের ভেতর থেকে দশ মাসের গর্ভবতী সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে দেখান।

 

হজরত সালেহ (আ.) তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার নিলেন, যদি আমি তোমাদের দাবি পূরণ করতে পারি তা হলে তোমরা আমার প্রতি ও আমার দাওয়াতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে কি না? সবাই এই প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করলেন। সেই পাহাড় ফেটে ভেতর থেকে তাদের দাবির অনুরূপ একটি গর্ভবতী উষ্ট্রী বের হয়ে এলো।

 

এই অলৌকিক উষ্ট্রী দেখে উপস্থিত অনেকেই হজরত সালেহ (আ.)-এর ওপর ঈমান নিয়ে আসেন। কিন্তু এমন প্রকাশ্য মুজেজা প্রত্যক্ষ করেও কিছু হতভাগা ঈমান আনলেন না। হজরত সালেহ (আ.) তাদের সতর্ক করে বললেন,

 

আল্লাহর এই উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন। অতএব তাকে আল্লাহর জমিনে বিচরণ করতে দাও এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করো না। নতুবা অতিসত্বর তোমাদেরকে আজাব পাকড়াও করবে। (সুরা হুদ ৬৪)।

 


গোত্রের কিছু দুষ্কৃতকারী লোক এই অলৌকিক প্রাণীটি হত্যা করে ফেলেন। হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হলেন না, হজরত সালেহ (আ.)-এর কাছে এসে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বললেন, তুমি সত্যিকারের রসুল হলে তোমার প্রতিশ্রুত আজাব আনো দেখি! আমরা তো উষ্ট্রীটি হত্যা করেছি। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর শাস্তি নেমে আসে। আল্লাহ তাআলা সেই অবস্থার বিবরণ দিয়ে বলেন,

 

এরপর তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল এবং নিজ প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বলল, হে সালেহ, নিয়ে এসো যা দ্বারা আমাদের ভয় দেখাতে, তুমি যদি রসুল হয়ে থাকো। তারপর তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল। ফলে সকালবেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (সুরা আঅন্য আয়াতে আছে, তাদের ওপর প্রচণ্ড ও বিকট শব্দবোমা নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। সামুদ সম্প্রদায়ের ওপর একই সঙ্গে ভূমিকম্প ও বিকট গর্জন এসেছিল এবং তারা এই দুটি শাস্তিতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা বহু নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন। তাদের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষদের হেদায়েত ও পথপ্রদর্শন করেছেন। যারা আল্লাহ ও তার রসুলগণকে অস্বীকার করেছিল তাদের ভয়াবহ ও রোমহর্ষক পরিণতি হয়েছে। সেসব পরিণতির কিয়দাংশ পরবর্তীদের শিক্ষার জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ রেখে দিয়েছেন।

 

ডেড সি, ফেরাউনের লাশ এবং হজরত সালেহ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের বিধ্বস্ত বাড়িঘর ইত্যাদি আল্লাহ তাআলা রেখে দিয়েছেন যাতে মানুষ এসব নিদর্শন দেখে দাম্ভিকতা পরিত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার প্রতি সেজদাবনত হয়।রাফ ৭৭-৭৮)।ন।দ ৬২)।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post