গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি যেন মুহূর্তের স্বস্তি এনে দেয়। বাইরে থেকে ঘেমে এসে বা প্রচণ্ড রোদের ক্লান্তি দূর করতে অনেকেই ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি বা বরফ দেওয়া পানীয় পান করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভ্যাস সাময়িক আরাম দিলেও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হজমে বাধা
চিকিৎসকদের মতে, ঠাণ্ডা পানি হজম প্রক্রিয়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলে
প্রচণ্ড গরমে শরীর যখন অতিরিক্ত গরম থাকে, তখন ঠাণ্ডা পানি পান করলে পাকস্থলীর রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে খাবার হজম হতে বেশি সময় লাগে এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। বিশেষ করে তৈলাক্ত খাবারের পর ঠাণ্ডা পানি পান করলে চর্বি জমে যেতে পারে, যা হজমের সমস্যাকে আরো জটিল করে তোলে।
গলা ও শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ
রোদ থেকে এসে হঠাৎ ঠাণ্ডা পানি পান করলে গলাব্যথা, সর্দি-কাশি ও টনসিলের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
এটি শ্বাসযন্ত্রে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা বা মিউকাস তৈরি করে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। যাদের ঠাণ্ডার ধাত আছে বা অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই অভ্যাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
হৃৎপিণ্ডেকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি হৃৎপিণ্ডের গতি কমিয়ে দিতে পারে। এটি ভেগাস নার্ভকে উদ্দীপিত করে, যা হৃৎস্পন্দনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ভেগাস নার্ভের ওপর ঠাণ্ডা পানির প্রভাবের কারণে হৃৎপিণ্ডের গতি কমে যেতে পারে, যা বিশেষত হৃদরোগীদের জন্য বিপদজনক।
দাঁতের ক্ষতি
ঠাণ্ডা পানি দাঁতের এনামেল বা বাইরের আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গরম থেকে ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে এলে দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়, যা এনামেলে ফাটল ধরাতে পারে। এর ফলে দাঁতে শিরশিরানি ও সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।
পানিশূন্যতার ঝুঁকি
ঠাণ্ডা পানি দ্রুত তৃষ্ণা মেটায়, ফলে মনে হতে পারে যে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হয়ে গেছে।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে শরীর আসলে পর্যাপ্ত পানি পায় না। এই ভুল ধারণার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।
মাইগ্রেন ও মাথাযারা মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ঠাণ্ডা পানি বিপদ ডেকে আনতে পারে। ঠাণ্ডা পানি পান করলে মস্তিষ্কের রক্তনালিগুলো হঠাৎ সংকুচিত হয়, যা মাইগ্রেন বা মাথাব্যথাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই, তবে তা স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা হালকা ঠাণ্ডা হওয়া উচিত। বাইরে থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা পানি পান না করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ঘরের তাপমাত্রার পানি পান করা বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া, দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান নিশ্চিত করতে হালকা লেবুর শরবত, ডাবের পানি বা ফলের রস পান করা যেতে পারে।
সূত্র : হেলথলাইন ব্যথার কারণর ওপর প্রভাব
Post a Comment