ইমাম কাতার সোজা করাবেন, জামাতের নামাজ শুরু করার আগে ইমাম কাতার সোজা করাবেন। অর্থাৎ মুসল্লিদেরকে কাতারে আগে পিছে বাকাতেরা হয়ে দাঁড়াতে নিষেধ করবেন। সকলকে সমান মিলেমিশে, সমানভাবে দাঁড়াতে বলবেন। ইমাম ঘোষণা করবেন, কাতার সোজা করুন, মিলেমিশে দাঁড়ান, মাঝের খালি জায়গা পূরণ করুন।
ইমাম কাতারের মাঝে দাঁড়ানো
জামাতে নামাজ পড়ানোর সময় ইমাম মুক্তাদির মাঝে দাঁড়ানো মাকরুহ। বরং ইমাম মুক্তাদীদের কাতার থেকে সামনে দাঁড়ানো উচিত। ইমাম কারো রেয়াত করে কেরাত লম্বা করা- জামাতে শামিল হওয়ার জন্য আগত মুসল্লিদের রেয়ায়াত বা খাতির করে ইমামের লম্বা কেরাত পড়া মাকরুহ। যদি ইমাম আগত মুসল্লিদের বিষয়টি জানার কারণে কেরাত লম্বা করে তাহলে মাকরুহে তাহরিমি হবে। আর না জানলে মাকরূহে তানজিহী হবে। আরে উভয় সুরতে নামাজ হয়ে যাবে। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই। অবশ্য সোওয়াব কম হবে।
ইমামকে যে অবস্থায় পাবে শরিক হয়ে যাবে- জামাতে নামাজ চলাকালীন কোন মুসল্লী আসলে ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায় নামাজের শরিক হয়ে যাবে। বিনা কারণে দেরি করা গোনাহ। ইমাম সেজদায় থাকলে সেজদায়, জলসায় থাকলে জলসায়, বৈঠকে থাকলে বৈঠকে শরিক হয়ে যাবে। দাঁড়ানোর অপেক্ষা কমসজিদের ইমাম নির্ধারিত না থাকলে, মুসল্লিদের উচিত উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্য ইমাম হওয়ার যোগ্য গুণাবলী যার মাঝে বেশি, তাকে ইমাম বানানো। যদি ইমাম হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন লোক একাধিক থাকে তাহলে অধিকাংশের মতের উপর আমল করবে। অর্থাৎ অধিকাংশ লোক যার ইমামতির জন্য মত প্রকাশ করবে তাকে ইমাম বানাবে। যদি উপস্থিত লোকদের মধ্যেও একজন যোগ্য লোক বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে ইমাম বানায়, তাহলে উপস্থিত মুসল্লীরা নবীজী স. এর সুন্নত তরককারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।২. এরপর যে ব্যক্তি কুরআন কারীম ভালো করে পড়তে জানে অর্থাৎ তাজবীদের কায়দা অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম আওয়াজে পড়তে পারে। ৩. এরপর যে ব্যক্তি অধিক পরহেজগার। ৪. এরপর যে ব্যক্তির বয়স বেশি। ৫. এরপর যে ব্যক্তির আখলাক ও চরিত্র ভালো। ৬. এরপর যার পোশাক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।
৭. এরপর যিনি সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান। ৯. এরপর যে ব্যক্তি জন্মগতভাবে স্বাধীন। ১০. এরপর হদসে আকবর ও হদসে আসগর থেকে তাইয়াম্মুমকারীদের মধ্যে, হদসে আসগর থেকে তায়াম্মুকারী অধিক যোগ্য। দুররুল মুখতার মা'আ শামী-১/৫৫৭-৫৫৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৮৩-৮৪, মারাকিল ফালাহ মা'আ তাহতাবি-পৃ ২৯৯-৩০১, আল বাহরুর রায়েক-১/৩৪৭-৩৪৮
লেখক: খতিব-কোনাবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, গাজীপুইমাম কেরাত পড়ার সময় মুক্তাদী চুপ থাকবে-যখন ইমাম নামাজে কেরাত পড়তে থাকে, চাই উচ্চ আওয়াজে পড়ুক-যেমন, ফজর মাগরিব এবং এশার নামাজ, অথবা অনুচ্চ আওয়াজে পড়ুক-যেমন জোহর এবং আসরের নামাজ তখন মুক্তাদির জন্য চুপ থাকা জরুরী। ইমাম কেরাত পড়ার সময় মুক্তাদির জন্য কোরআন মাজিদের কেরাত পড়া, চাই সূরা ফাতেহা হোক বা অন্য কোন সূরা হোক অথবা দোয়া পড়া হোক মাকরুহে তাহরিমি। (দুররুল মুখতার-১/৫৪৪,বাদায়ে১/১১১)
ইমাম কোথায় দাঁড়াবে
ইমামের জন্য সুন্নত হল মেহরাবের অথবা নামাজীদের মাঝ বরাবর সামনে দাঁড়ানো। ইমামের উচিত কাতারের সামনে দাঁড়ানো যদি বিনা ওজরে ডানে বা বামে দাঁড়ায় তাহলে সুন্নত তরককারী হবে। গরমের কারণে যদি বারান্দায় জামাত হয় তাহলে ইমাম মেহেরাবের বরাবর সামনাসামনি দাঁড়ানো উচিত। যদি ইমাম মেহরাবের সামনাসামনি না দাঁড়ায় তাহলে নামাজ তো হয়ে যাবে, তবে সুন্নতের খেলাফ হবে। যদি কোন মসজিদের বারান্দা একদিকে বেশি থাকে তাহলে ইমাম সাহেব বারান্দা হিসেবে মাঝে দাঁড়াবে, মেহরাব হিসেবে নয়।
ইমাম মেহরাবের ভিতরে দাঁড়ানো
জামায়াতে নামাজ পড়ানোর সময় ইমাম মেহরাবের ভিতরে দাঁড়ানো মাকরুহ। যদি ইমামের পায়ের কিছু অংশ মেহরাবের বাইরে থাকে তাহলে মাকরূহ হবে না। ইমাম জামাতের নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর মেহরাবের ভেতর একাকী সুন্নত ও নফল পড়াতে কোন দোষ নেই। যদি নামাজীদের ভিড় এবং জায়গার সংকীর্ণতার কারণে ইমাম মেহরাবের ভিতরে দাঁড়াতে হয় তাহলে মাকরূহ হবে না।
ইমাম সালাম ফেরানোর সময়
ইমাম সালাম ফেরানোর সময় উচ্চস্বরে বলবে السلام عليكم ورحمه الله দ্বিতীয় সালামের আওয়াজ প্রথম সালামের আওয়াজ অপেক্ষা নিচু ও আসতে হওয়া উচিত। ইমাম ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় সেদিকের মুসল্লিদের নিয়ত করবে। মুসল্লী চাই শুধু পুরুষ হোক বা মহিলা বা বালক অথবা হিজরা হোক এবং মহাফিজ ফেরেশতাদেরকেও নিয়ত করবে।
ইমাম সালাম ফেরানোর পর কোন দিকে মুখ করে বসবে?
যেসব নামাজের পর সুন্নত নামাজ নেই, যেমন ফজর এবং আসরের নামাজের পর ইমামের এখতিয়ার রয়েছে, চাই ডান দিকে মুখ করে বসুক অথবা বাম দিকে মুখ করে বসুক। হাদিস শরীফে উভয় সুরত প্রমাণিত আছে। তবে ইমাম দিক পরিবর্তন করবে। কখনো ডান দিকে কখনো বাম দিকে মুখ করে বসবে। যাতে সাধারণ মানুষ কোন একদিকেই আবশ্যক এবং জরুরি মনে না করে।
ইমাম হওয়ার অধিক যোগ্য
১. যে ব্যক্তি নামাজের মাসয়ালা মাসায়েল সম্পর্কে অধিক জানেন এবং নামাজে যে পরিমাণ কেরাত পাঠ করা সুন্নত সে পরিমাণ কেরাত পাঠে সক্ষম। বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরহেজগার ও মুত্তাকি ফাসেক ফাজের নয়। এমন ব্যক্তি ইমাম হওয়ার অধিক যোগ্য।র।রবে না।
Post a Comment