যেসব দোয়ায় আল্লাহর সাহায্য আসে

 মানুষের জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান। এখানে সুখ-দুঃখ, সাফল্য-বিফলতা, সহজ ও কঠিন—সবই আল্লাহর পরীক্ষা। কিন্তু আল্লাহর অসীম রহমত ও ক্ষমাশীলতার ওপর ভরসা রেখে আমরা দুঃখের অন্ধকারে আলোর পথ খুঁজে পাই। এই দোয়াগুলো পড়ার মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর কাছে সাহায্য, রিজিক বৃদ্ধি, সংকটমোচন এবং সুরক্ষা প্রার্থনা করতে পারেন।


১. ইউনুস (আ.)-এর দোয়া: বিপদের চূড়ান্ত মুহূর্তে

এটি সেই দোয়া যা পড়ে নবী ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এটি বিপদের সময় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের সর্বোত্তম উপায়।


لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ-জোয়ালিমিন।

অর্থ: তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমি পরিপূর্ণ পবিত্র; আমি অবশ্যই অন্যায়কারী ছিলাম।

ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, এই দোয়া পড়লে আল্লাহ সংকট ও দুঃখ দূর করেন। (তিরমিজি: ৩৫০৫)

পড়ার সময়: বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সময় পড়া উত্তম।


২. ইস্তেগফারের দোয়া: সব সংকট থেকে মুক্তির পথ

যে ব্যক্তি নিয়মিত এই ইস্তেগফার পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য সব সংকট থেকে মুক্তির পথ খুলে দেবেন এবং অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন।


أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ: আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন এবং আমি তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি।

ফজিলত: হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তার জন্য সব সংকট থেকে মুক্তির পথ খুলে দেন। (আবু দাউদ: ১৫১৭)

পড়ার সময়: ফজরের নামাজের পর ১০০ বার পড়া ভালো।

৩. মসিবতে পড়ে গেলে যে দোয়া পড়বেন

কোনো কঠিন মুসিবতে পড়লে এই দোয়াটি ধৈর্য ধারণ এবং আল্লাহর সাহায্যের জন্য খুবই কার্যকরنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي

উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে মসিবতে সাওয়াব দান করো এবং এর বিনিময়ে এর চেয়ে উত্তম বস্তু দান করো।’

ফজিলত: এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাআলা উত্তম বিনিময় দান করেন। (সহিহ মুসলিম: ৯১৮


৪. আল্লাহর গুণবাচক নামের মাধ্যমে দোয়া: দ্রুত সাহায্য লাভের জন্য

এই দোয়াটি আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম দিয়ে শুরু হয়েছে, যা তাঁর চিরন্তন ক্ষমতা ও দয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে।


يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ

উচ্চারণ: ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়ুম, বিরাহমাতিকা আসতাগিস।

অর্থ: ‘হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! তোমার রহমতের সাথে আমি প্রার্থনা করছি।’

পদ্ধতি: সেজদার অবস্থায় ৭ বার পড়ার পরামর্শ দেন আলেমরা।


৫. শত্রুর কবল থেকে রক্ষার দোয়া

যখন হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, তখন তিনি এই দোয়াটি পড়েছিলেন। এটি শত্রুর ভয় থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসার ঘোষণা।


حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

উচ্চারণ: হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল।

অর্থ: আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক

পদ্ধতি: ৩ বার পড়া উত্তম; কেউ কেউ পড়ার পর ওপর দিকে ফুঁকে দেওয়ার কথা বলেছেন।


৬. সহজ কিন্তু শক্তিশালী দোয়া: জান্নাতের গুপ্তধন

এটি জান্নাতের গুপ্তধনসম একটি দোয়া, যা জীবনের সব সমস্যাকে সহজ করে তোলে।


لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ: আল্লাহর সহায়তা ব্যতীত আর কোনো আশ্রয় ও সাহায্য নেই।

ফজিলত: রাসুল (স.) বলেছেন, এটি জান্নাতের গুপ্তধন। (সহিহ বুখারি: ৬৩৮৪)

পড়ার সময়: প্রতিদিন ১০০ বার পড়া উত্তম।


দোয়া কবুলের শর্তাবলী

দোয়া কবুলের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করা জরুরি:


হালাল রিজিক: হালাল উপার্জন ও খাদ্য গ্রহণ।

ইখলাস: খাঁটি মনে দোয়া করা।

ধৈর্য: দোয়া কবুলের পর আল্লাহর ফয়সালার জন্য ধৈর্য ধারণ করা।

হারাম পরিহার: সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে দূরে থাকা।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া হল ইবাদতের মূল।’ (তিরমিজি: ৩৩৭১) উপরোক্ত দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করার পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, দোয়ার সঙ্গে সততা ও পরিশ্রম অপরিহার্য। আল্লাহর ফয়সালা মেনে ধৈর্য ধারণ করা এবং হারাম থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। আপনার জীবনের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে এই দোয়াগুলো পড়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন, ইনশাআল্লাহ কবুল হবে


Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post