তিনজনের ডিএনএর সমন্বয়ে জন্ম ৮ শিশুর, সুস্থ সবাই

 

যুক্তরাজ্যে তিন ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করে আইভিএফ পদ্ধতিতে জন্ম নিয়েছে আটটি শিশু। ওই আটটি শিশুই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডোনেশন ট্রিটমেন্ট (এমডিটি) নামে পরিচিত এই পদ্ধতিতে আইভিএফের মাধ্যমে ভ্রূণ তৈরি করা হয়, যাতে শিশুরা জিনগত দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের ওই শিশুদের মায়েদের মাইটোকন্ড্রিয়ায় মিউটেশন থাকায় তাদের সন্তানদের প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সাত নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া ওই আট শিশুর মধ্যে চারটি ছেলে ও চারটি মেয়ে। এর মধ্যে একজোড়া যমজ রয়েছে। তাদের কারও মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত রোগের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে এমডিটি চিকিৎসা পদ্ধতির অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির একটি ক্লিনিক প্রথম লাইসেন্স পায়। সেখানেই এই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছিলেন গবেষকেরা।


মানুষের শরীরে থাকা ২০ হাজার জিনের বেশির ভাগই নিউক্লিয়াসে থাকে। কিন্তু নিউক্লিয়াসের বাইরে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়ায় থাকে মাত্র ৩৭টি জিন। এদের মিউটেশন হলে মাইটোকন্ড্রিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারেমাইটোকন্ড্রিয়া কেবল মায়ের কাছ থেকেই সন্তানের শরীরে যায়। তাই ক্ষুদ্র মাইটোকন্ড্রিয়ায় মিউটেশন থাকলে একজন নারীর সব সন্তানই আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত রোগের প্রথম লক্ষণ শিশু বয়সেই দেখা দেয়। মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র বা পেশির কার্যকারিতা কমে যায়। অনেক শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়, এমনকি অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়। প্রতি ৫ হাজার নবজাতকের মধ্যে একজনে এই ধরনের রোগ দেখা যায়।


এমডিটি পদ্ধতিতে মায়ের ডিম্বাণুতে বাবার শুক্রাণু দিয়ে নিষিক্ত করার পর নিউক্লিয়াসের জিন অন্য একটি সুস্থ ডোনার নারীর নিষিক্ত ডিম্বাণুতে স্থানান্তর করা হয়। এতে তৈরি হয় একটি নতুন নিষিক্ত ডিম্বাণু– যেটিতে থাকে প্রকৃত বাবা-মায়ের জিন, কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে ডোনারের। এরপর এটি মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হযুক্তরাজ্যে এই পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া আট শিশুকে নিয়ে দুটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে। আটজনই জন্মের সময় সুস্থ ছিল। এক শিশুর মূত্রনালিতে সংক্রমণ হয়েছিল, তবে সেরে গেছে। আরেকজনের পেশিতে টান ধরেছিল, সেটিও সেরে ওঠে। তৃতীয় একজনের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনের সমস্যা হয়েছিল, সেটিও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।


জিনগত পরীক্ষায় দেখা গেছে, শিশুদের শরীরে মিউটেটেড মাইটোকন্ড্রিয়া নেই বা থাকলেও খুব সামান্য পরিমাণে। গবেষকেরা মনে করছেন, হয়তো নিউক্লিয়াস স্থানান্তরের সময় ডিম্বাণুর সঙ্গে অল্প কিছু মিউটেটেড মাইটোকন্ড্রিয়া চলে যায়। এই পরিমাণ এত কম যে তা থেকে রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে গবেষকেরা বলছেন, পদ্ধতিটি আরও উন্নত করার সুযোগ আছে।য়।।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post