ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যা রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হয়। এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাত্রার সঠিক নিয়ম মেনে চলা। কিন্তু অনেকেরই মনে প্রশ্ন—ফল খাওয়া কি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর? কারণ বেশিরভাগ ফলেই প্রাকৃতিকভাবে চিনি থাকে। তবে বাস্তবতা হলো, কিছু নির্দিষ্ট ফল ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এবং এগুলো শরীরে পুষ্টি জোগায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এমনকি রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।কোন ফল ডায়াবেটিস রোগীর শরীরের জন্য কতটা উপকারি বা ক্ষতিকর তা নির্ভর করে ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) এর উপর। এখন প্রশ্ন হলো, ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?ফল খাওয়ার আগে একটি বিষয় জানা জরুরি, সেটি হলো ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ বা GI। GI একটি স্কেল যা ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত হয় এবং তা কোন খাবার কত দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায় তা বোঝায়। যেসব ফলের GI ৫৫ বা তার নিচে, সেগুলোকে ‘লো GI’ ফল বলা হয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ। যেসব ফলের GI বেশি (৭০ বা তার বেশি), সেগুলো দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দিতে পারে।গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI ≤ ৫৫): ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এবং ধীরে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায়।
আপেল ৩৮–৪৪
নাশপাতি ৩৮–৪২
জাম ২৫–৪০
আমড়া ৩০–৪০
পাকা পেঁপে ৪২–৫২
বেল ৪০–৫০
বরই (কাঁচা) ২৫–৪৫
তেঁতুল ৩১
কাঁঠাল (মাঝারি পাকা) ৫০–৫৫
পেয়ারা (কাঁচা বা আধা পাকা) ৪৫–৫০
কমলা ৪০–৪৫
মাল্টা ৪০–৪৫
লেবু / কাবাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন ফলগুলিকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) অনুযায়ী তালিকা দেওয়া হলো:মিডিয়াম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI ৫৬–৬৯): পরিমিতভাবে খাওয়া যেতে পারে এবং বিশেষ করে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে খাওয়া যায়।
আম (পাকা) ৫৫–৬০
আনারস ৫৯–৬৬
কাঁঠাল (পাকা) ৫৮–৬৫
পাকা পেঁপে ৫৮–৬৫
ডালিম / বেদানা ৬০–৬৫
নারকেল পানি (অল্প) ৫৫–৬০
হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI ≥ ৭০): ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এড়িয়ে চলা ভালো কারণ এগুলো রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ায়।
তরমুজ ৭২–৮০
কিশমিশ (ড্রাই ফল) ৬৫–৮০
খেজুর (পাকা) ৭০–৯৫
চিনি যুক্ত ফলের জুস >৭০
শুকনো আনারস/পাকা ফল খাওয়ার সময় যেসব নিয়ম মানা উচিত:
১. খালি পেটে বা ভারী খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভরা পেটে ফল খাওয়া ঠিক নয়। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। খাবারের বেশ কিছুক্ষণ পর বা হালকা নাশতার সঙ্গে খাওয়াই উত্তম।
২. ফলের রস বা জুসের বদলে আস্ত ফল খাওয়া ভালো। ফলের রসে বা জুসে ফাইবার থাকে না এবং তা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায়।
৩. একসাথে একাধিক ফল না খাওয়াই ভালো। প্রতিদিন দুই ধরনের ফল খাওয়া যেতে পারে, তবে মোট ফলের পরিমাণ ১ কাপের বেশি না হওয়াই ভালো।
৪. রাতের খাবারের পরে ফল খাওয়ার বদলে সকালে ও দুপুরের মাঝে নাস্তার সময় ফল খাওয়া উত্তম।
৫. ফল খাওয়ার পর শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করুন যেমন হালকা হাঁটা, যাতে গ্লুকোজ নিঃসরণ সহজ হয়।
৬. কোনো নতুন ফল খাওয়ার আগে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ মাপুন, নতুন কোনো ফল খাওয়ার পর রক্তে এর প্রভাব লক্ষ করা জরুরি। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারেন।
ডায়াবেটিস থাকলেই যে ফল খাওয়া যাবে না, এ ধারণা ঠিক নয়। বরং কিছু নির্দিষ্ট ফল সঠিকভাবে খাওয়া হলে তা শুধু নিরাপদ নয়, বরং উপকারি। ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলস পেতে ফল খাওয়া জরুরি। তবে পরিমিতি ও নিয়ম মানার ওপরই নির্ভর করে এর উপকারিতা। তাই ফল খেতে হবে চিন্তাভাবনা করে এবং সঠিক নিয়ম মেনে।
লেখক: নিউট্রিশন অফিসার, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিআমের আচার ৭৫–৯০গজি লেবু ৩০
Post a Comment